ঘূর্ণিঝড়ঃ ঘুরে দাঁড়ানোর উত্তর খুঁজছেন সুন্দরবনের মানুষ

ইয়াসের আগমন যেন ঘূর্ণিঝড় আম্পানের বর্ষপূর্তি। পূর্বাভাস শোনার পর ফের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের মানুষগুলোর মধ্যে।

বেশিরভাগ মানুষ জানিয়েছেন, গতবছর যে পরিমাণ তাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার হিসেব এখনও কষে উঠতে পারেননি তারা। সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, নামখানা মৌসুনিদ্বীপ, গোসাবাসহ একাধিক অঞ্চলের গ্রামবাসীরা গত বছরের ধাক্কার পর নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ফের ইয়াসের ভ্রুকুটিতে গতবারের আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে অসহায় মানুষগুলোকে।

এমনকী বেশিরভাগ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঝড় চলে যাওয়ার পরে তারা ত্রিপল এবং শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি সরকারিভাবে খুব একটা পাননি। তবে এমনটা নয় সরকার সহযোগিতা করেনি। সেবারও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেছিল। কিন্তু, মাঝখানে অজ্ঞাত কালোবাজারিদের কারণে সবটা তা আর তাদের কাছ পর্যন্ত যায়নি। জেলায় জেলায় তৃণমূলের কিছু নেতা ধরা পড়ে অন্যায়ও স্বীকার করেছিল। তাই তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে আর ভুল নয় সেই মর্মেই এগোচ্ছে মমতার প্রশাসন।

ওই এলাকায় গ্রামের মহিলাদের বক্তব্য, ‘আম্পানের আঘাতে বাড়িঘর সব চলে গিয়েছিল। কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে ঘরখানা দাঁড় করিয়ে দিনযাপন চলছিল। আরেকটি ঝড় আসছে। এরপর কীভাবে বেঁচে থাকব জানি না। ’

এবারেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়তে চলেছে উড়িষ্যার পারাদ্বীপ এবং সুন্দরবন লাগোয় সাগরদ্বীপে। ফলে সবচেয়ে আতঙ্কিত সেখানকার মানুষ।

সাগরদ্বীপের বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘গতবছর মমতার প্রশাসন আমাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাই প্রাণে বেঁচে গেছি। বাড়ি ঘরদোর সব উড়ে গিয়েছিল। একটা বছর নতুন করে জীবন শুরু করেছি। কিন্তু তার ভীত মজবুত হতে না হতেই আবারও একটি বড় ধাক্কা আসতে চলেছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের কাছে। ’

ক্ষমতায় আসামাত্র এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারটা মমতার কাছে সম্ভবত কাঁটার মত বিঁধছে। একদিকে গোটারাজ্য করোনার কবলে। তা সামলাতে লকডাউন। ফলে অর্থনৈতিক মন্দার মুখ অনেকটাই দেখতে হবে। তারমধ্যে রাজ্যে একটু একটু করে প্রকট হচ্ছে আর এক মহামারি ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’। অপরদিকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকাড়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব। তাছাড়া মমতার সঙ্গে মোটেও সুসম্পর্ক নেই মোদি সরকারের।

আবার এরইমধ্যে রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হাইকোর্টের নির্দেশে গৃহবন্দী। শুধু গুরুত্বপূর্ণ বলেই শেষ করা যাবে না। পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, যার হাতে করোনা মোকাবিলার চাবিকাঠি দিয়েছেন মমতা। অপরদিকে, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জী। ধারণা করা যাচ্ছে, ইয়াসের জেরে রাজ্যে এবারও উজাড় হতে চলেছে গ্রামের পর গ্রাম। আর তা মেদিনীপুর হোক বা দক্ষিণ ২৪পরগণা। অথচ নারদাকান্ডের জেরে স্বয়ং গ্রাম দেখভালের মন্ত্রী এখন গৃহবন্দী।

গতবারে রাজ্যে ঝড়ের দাপটে মৃত্যু হয়েছিল একশো জনের অধিক। উপড়ে গিয়েছিল হাজারের বেশি বিশাল মাপের গাছ। কত গ্রাম চলে গিয়েছিল পানির তলায়। তবে দক্ষ প্রশাসকতো তাকেই বলে, যে কঠিন সময়ে মোকাবিলা করতে জানে। মমতার কাছেও এখন সেরকমই একটা চ্যালেঞ্জ। তবে রাজ্যবাসী ‘দিদি’র ওপর ভরসা রেখেছেন ফের একবার তার হাতে ক্ষমতা দিয়েছেন। এখন দেখার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসবের মোকাবিলা কীভাবে করেন।

ইতোমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন ২৫ এবং ২৬ দুই রাতই বাসায় ফিরবেন না। নবান্নে থেকেই সমস্ত বিষয়ের ওপর নজর রাখবেন। বচসা ভুলে এগিয়ে আসছে মোদী সরকারও। তৎপর ভারতীয় সেনাবাহিনীও। আম্পানের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন সব পক্ষ। তবে ঝড় হয়তো মোকাবিলা করা যাবে। কিন্তু এরপর? যেসব রাজ্যবাসীর সবকিছু কেড়ে নিয়েছিল আম্পান। এবার যদি সেরকমটা হয়? তাদের কি হবে? সবে তারা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন। সেই চেষ্টা দীর্ঘস্থায়ী হবে তো ইয়াস চলে যাওয়ার পরে? পশ্চিমবঙ্গে হাজার হাজার গ্রামবাসী এখন সেই উত্তরই খুঁজছেন।

Scroll to Top