ইসরাইলি দখলদার বাহিনী গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। হামলায় ১৬ শিশুসহ নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০০ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দুদেশের এই অবস্থা যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তাতে জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, পরিস্থিতি ‘একটা পূর্ণাঙ্গ মাত্রার যুদ্ধের’ দিকে এগোচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস গত ৩৮ ঘণ্টায় দেড় হাজারেরও বেশি রকেট ছুঁড়েছে, যার বেশিরভাগ তেল আবিবের উপর। ইসরাইলও গাজা উপত্যকার একশর বেশি স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। গত সোমবার থেকে দখলদার ইসরাইলি জঙ্গি-বিমানগুলো গাজার বিভিন্ন এলাকায় অব্যাহত বোমাবর্ষণে তিনটি উঁচু টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ৬৫ জনের হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ইসলামী জিহাদের তিনজন প্রতিরোধ যোদ্ধা রয়েছেন। এছাড়া এক জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
এদিকে, গতকাল বুধবার ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরাইলের ছয়জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এশকেলন শহরে দুইজন, তেল আবিবের রিশন এলাকায় একজন প্রাণ হারিয়েছে। ট্যাংক বিধ্বংসী রকেটের হামলায় একজন নিহত হয়েছে বলেও পত্রিকাটি জানিয়েছে, তবে কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে তা উল্লেখ করেনি।
গাজা উপত্যকায় চলমান সহিংসতায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্টোনিও গুতেরেস ‘গভীরভাবে উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে করা এক ফোনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন তার দেশে হামাসের রকেট হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসরাইলের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি এও জানিয়েছেন, উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তিনি উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যাডি আমরকে পাঠিয়েছেন।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামলার বিষয়ে বলেছেন, এটি কেবল শুরু। আমরা তাদের এমনভাবে আঘাত করব, যা তারা স্বপ্নেও ভাবেনি। আমরা সামরিক অভিযানের মধ্যবর্তী অবস্থায় রয়েছি। হামাস ও ইসলামী জিহাদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। আমরা অরাজকতা বন্ধ করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ইসরাইলের শহরগুলোতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও নির্মমভাবে ও নৃশংস উপায়ে সমস্ত বাহিনী দিয়ে এই অরাজকতা বন্ধ করা হবে।’
অপরদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এক টুইট বার্তায় ইসরাইলের ‘সামরিক আগ্রাসন’-এর নিন্দা জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে হামাসের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেমে ‘সহিংস কর্মকাণ্ড’ ও এখানকার ‘বাসিন্দাদের প্রতি অবৈধ ব্যবস্থা নেওয়া’ বন্ধ করে দিলে তারা যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত ছিল।
এদিকে হামাসের আরেক বিবৃতির বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগঠনটি হাজার হাজার নেতা ও সেনা তাদের পদক্ষেপে অনুসরণ করবে বলে জানিয়েছে।
হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘাত শুরুর পর থেকে ১৪ জন শিশুসহ অন্তত ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে আরও ৪০০ জনেরও বেশি।
২০১৪ সালের পর এটাই দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র হামলার ঘটনা। হামাসের দাবি, তাদেরকে রকেট হামলায় প্রলুব্ধ করেছে যে, ‘শত্রুরা তাদের আবাসিক টাওয়ারগুলোকে লক্ষ্য করে’ হামলা করছে। বিমান হামলার আগে সেখানকার বাসিন্দাদের ভবনগুলো খালি করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল; তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছে, গাজায় এখনও বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হচ্ছে।
এএফপির বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, গত মঙ্গলবারের বিমান হামলায় দুই ভাইসহ একই পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।
গাজা উপত্যকার ১১ বছর বয়সী ইয়াসমিন সেভ দ্য চিলড্রেনকে বলে, ‘মঙ্গলবার রাতটি তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ রাত।’
ইসরাইলে কী ঘটছে?
ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখার রকেট হামলায় অন্তত শিশুসহ ছয়জন ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ইসরাইলি সৈন্য রয়েছেন। এছাড়া হামাসের হামলায় অন্তত ১০০ জন ইসরাইলি আহত হয়েছেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড় হাজার রকেট হামলা চালিয়েছে গাজা। বুধবার সন্ধ্যায় হামাসের রকেট হামলার সময় দেশজুড়ে যখন সতর্কতা সংকেত বাজানো হচ্ছিল, তখন লাখ লাখ মানুষ বোমা শেল্টারের দিকে যাচ্ছিল।
বুধবার সকালে গাজা থেকে নিক্ষেপ করা একটি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরাইলের একজন সেনা নিহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ইসরাইলের লড শহরে জরুরি অবস্থা
ইসরাইলের লড শহরে ইসরাইলি আরবদের বিক্ষোভ পুরো মাত্রার দাঙ্গায় রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়তে থাকে এবং পুলিশ জবাবে স্টেন গান চালায়।
সংঘর্ষে ৫২ বছর বয়সী এক বাবা এবং তার ১৬ বছর বয়সী কন্যা নিহত হয়। একটা রকেট এসে তাদের গাড়িকে আঘাত করলে তারা মারা যান। ইসরাইলি সংবাদপত্র হারিৎজ-এর খবরে বলা হয়, সংঘর্ষে আহত হয়েছে আরও অনেক মানুষ।
মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী লড শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত লড শহরে কারফিউ চলবে।
১৯৬৬ সালের পর এই প্রথম সরকার আরব সম্প্রদায়ের ওপর জরুরি আইন প্রয়োগ করল বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরাইল পত্রিকা।
সংবাদ সূত্রঃ টাইমস অব ইসরাইল,রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি