দক্ষিণ এশিয়ার সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে মধ্য প্রাচ্যের রাষ্ট্র সৌদি আরবের সহযোগিতার সম্পর্ক আগামী দিনে আরও ভালোভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। দুই দেশ আগামীতে একযোগে কীভাবে কাজ করবে, রোডম্যাপে থাকবে সে নির্দেশনা।
এ রোডম্যাপ তৈরির লক্ষ্য হলো- দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় এসব তথ্য।
ওই সূত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরে গতি পাচ্ছে ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্কে। দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামরিক সহযোগিতা বাড়ছে। এছাড়া সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে প্রায় ২৩ লাখ। তারা বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। এসব বিষয় সামনে রেখেই রোডম্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতা বাড়ছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। সৌদি সীমান্তে মাইন অপসারণে বাংলাদেশ সহায়তা দিতেও সম্মত হয়েছে। এছাড়া ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ। হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব সময়েই তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
এদিকে করোনাকালে সৌদি আরবে অনেক বাংলাদেশি কর্মী কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েন। আবার করোনায় সৌদি আরবে অনেক বাংলাদেশির মৃত্যুও হয়েছে। তবে করোনা মহামারি সংকটের সেই ধাক্কা অনেকটাই এখন কাটিয়ে উঠেছে দেশটি। এদিকে বাংলাদেশ এখন স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হতে চলেছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়- তা নিয়ে পরিকল্পনা থাকবে রোডম্যাপে।
দুই দেশের মধ্যে রোডম্যাপ তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ থেকে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ-সৌদি আরবের মধ্যে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে একটি রোডম্যাপ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের রয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস), ফরেন সার্ভিস একাডেমির বঙ্গবন্ধু সেন্টার অব অ্যক্সিলেন্স। একইভাবে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও এই ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান একযোগে মিলে এই রোডম্যাপ তৈরি করবে।
করোনাকালে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে টেলিফোনে একাধিকবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আলাপ করেছেন। এছাড়া গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সফর করেছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সৌদি আরব সফরকালে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল জুবেইরের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিস্তারিত আলোচনা হয়।