মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামী জনতার ওপর ফের গুলি, নিহত ৩৮

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামী জনতার ওপর আবারও গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বুধবার (৩ মার্চ) দেশটির একাধিক শহরে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছে।

গতকাল রাতে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর এএফপি, রয়টার্সের।

গত মাসে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর এক দিনের হিসাবে গতকালই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানান। এর পরদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের এ ঘটনা ঘটল। এছাড়া জান্তা সরকার অ্যাসোসিয়েট প্রেসের একজন ফটোগ্রাফারসহ ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।

ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার বলেন, ‘শুধু আজই (বুধবার) ৩৮ জন মারা গেছে, অভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে আজই। এ নিয়ে সেনা অভ্যুত্থানের পর অন্তত অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারাল। ’ অবিলম্বে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করে ক্ষমতার দখল নেয় সামরিক বাহিনী। এই অভ্যুত্থানের পর থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজপথে বিক্ষোভ চলছে।
পুলিশের গুলিতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। জান্তা সরকারের ওপর প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।

পশ্চিমা একাধিক দেশ এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। সবশেষ মিয়ানমার প্রশ্নে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বান করেছে ব্রিটেন।

এদিকে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস গতকালের রক্তক্ষয়ের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দমন-পীড়ন থেকে সরে এসে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেও তিনি একাধিকবার সু চিসহ আটক রাজবন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় মিয়িংগিন শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছে। আর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে প্রাণ হারিয়েছে দুজন। কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেটের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাজা গুলি ছোড়েন। মিয়িংগিনে আহত হয়েছে অন্তত ১৭ জন। আর মোনিয়া শহরে দুজন উদ্ধারকর্মী দুজনের মরদেহ সরিয়ে নিতে দেখেছেন। প্রতিদিনের মতো এদিন ইয়াঙ্গুনেও বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটির বৃহত্তম এ শহরে একজনের প্রাণহানির কথা জানা গেছে। এসব শহরের পাশাপাশি চিন, কাচিন ও শান রাজ্যে এবং সাগাইং ও দাউই শহরে প্রতিবাদ হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের ওপর বল প্রয়োগের পাশাপাশি ধরপাকড়ও অব্যাহত রয়েছে। ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০০ জনকে আটক করেছে। পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের (এএপিপি) হিসাবে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ২০০-এর বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০০ জন এখনো কারাগারে আছে বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

Scroll to Top