২০২০ সালে গোটা বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানই অচল হয়ে পড়েছিলো গুনতে হয়েছে অনেক লোকসান। একরকম অচল হয়ে পড়েছে বিমান খাত তবে তা এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কিন্তু চলতি বছর যতোটা দ্রুতগতিতে এ খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা ছিলো, সে আশায় গুড়েবালি। নতুন ধরনের করোনার সংক্রমণ, সারাবিশ্বে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু, সব মিলিয়ে এখনো সারাবিশ্বেই আছে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আর নানা বিধিনিষেধ।
এ কারণে সারাবিশ্বে এখনো স্থবির জেট ফুয়েল আর জ্বালানি তেলের বাজার। গেল বছর এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বিক্রি হয়েছে জেট ফুয়েল। ২০২১ সালেও এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কোন সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না।
২০১৯ সালেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সহযোগী দেশগুলোর জোট ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর জেট ফুয়েলের চাহিদা ছিল ১০ শতাংশ। ২০২০ সালে যা নেমে এসেছে ৬ শতাংশে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা আইইএ বলছে, এসময় গ্যাসোলিনের চাহিদা বরং তুলনামূলক বেশিই ছিল। আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস গেল মাসেই পূর্বাভাস দেয়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সারাবিশ্বে জ্বালানির চাহিদা থাকবে ৭ লাখ ব্যারেল। এ পরিমাণ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে মোট চাহিদা কমায় খুবই নগণ্য।
ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম শুরুতে দেরি হওয়ায় এখনো ফাঁকা আকাশ পখ। হাজার হাজার বিমান অলস পড়ে আছে। অনেক এয়ারলাইন্স দেউলিয়া হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেট ফুয়েলের বাজার স্থিতিশীল হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্বাভাবিক হবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল।
আইইএ বলছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের তুলনায় ৩৫ গুণ বেশি জেট ফুয়েলের প্রয়োজন পড়ে। এভিয়েশন খাতে যে পরিমাণ ফুয়েলের প্রয়োজন হয়, তার তিনভাগই প্রয়োজন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে দৈনিক ৫৪ থেকে ৫৭ লাখ ব্যারেল জেট ফুয়েলের চাহিদা থাকবে সারাবিশ্বে। ২০১৯ সালে যা ছিল ৭৯ লাখ ব্যারেল।
এশিয়ায় ধীরে ধীরে বাড়ছে জেট ফুয়েলের চাহিদা। ইউরোপেও বাড়ছে। তবে সরবরাহ কমায় বেড়েছে মজুদ। আমস্টারডামের রোটারড্যাম অ্যান্টরিপ হাবে গেল সপ্তাহে জেট ফুয়েলের মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৮৩ হাজার টন, যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১০ শতাংশ বেশি।
ইন্টেলিজেন্স ফার্ম কেপলার বলছে, ফেব্রুয়ারিতে সারাবিশ্বে জেট ফুয়েলের মজুদ বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ লাখ ব্যারেলে। ২০২০ সালের আগস্টে এ পরিমাণ ছিল ২ কোটি ব্যারেল।
মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেল রফতানি নির্ভর দেশগুলোতে জেট ফুয়েলের চাহিদা কমার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মজুদ বেশি থাকলেও জেট ফুয়েল রফতানি করতে হবে অনেক দেশকে। কারণ কমিয়ে দিলেও জ্বালানি উত্তোলন বন্ধ করার কোন উপায় নেই। এ কারণে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করছেন সংশ্লিষ্টরা।