মার্কিন নির্বাচনে বাইডেনের জয়: অভিবাসন-জলবায়ু ইস্যুতে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ায় অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশ সুবিধা পেতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার এলেও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

তবে এই দুই ইস্যুতে বাংলাদেশ সুবিধা পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জো বাইডেন। এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে সিনেটর ছিলেন তিনি। সেই সময় একাধিকবার অভিবাসন ও জলবায়ু ইস্যুতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন বাইডেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অস্থায়ী ভিসা বাড়লেও স্থায়ী ভিসা কমেছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ লাখ মানুষকে স্থায়ী ভিসা দিলেও ২০১৯ সালে স্থায়ী ভিসা দেয়া হয় ১০ লাখ লোককে। এছাড়া ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শরণার্থী প্রবেশের অনুমতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। একই ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক, সোমালিয়া, ইরান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কমেছে। সে সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ একেবারেই বন্ধ করে দেবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়। একই সাথে নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিক ও শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি থেকে তার দেশের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে রক্ষা পেতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের এই চুক্তির প্রতি সমর্থন থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তি থেকে সরে আসায় বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের সমালোচনা শুরু হয়।

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ১০০ দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের অভিবাসন সংক্রান্ত অনেক সিদ্ধান্ত ও নীতি বাতিল করে দেবেন। বিশেষ করে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে অভিবাসন নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা বাতিল করবেন বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রায় ৬ লাখ অভিবাসী রয়েছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই থাকেন নিউইয়র্কে। তবে এসব অভিবাসীদের মধ্যে বৈধ ও অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অভিবাসন নীতি কঠোর হলেও বাইডেন প্রশাসনের আমলে তা অনেকটা শিথিল হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। আর সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা সুবিধা পেতে পারেন বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীরা বৈধ হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় বৈশ্বিক ফোরামে কাজ করছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বে যে কয়েকটি দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে জোর দিয়েছেন জো বাইডেন। নির্বাচনী ইশতেহারেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র একযোগে কাজ করতে আরো সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অভিবাসন ও জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জো বাইডেন জলবায়ু ইস্যুতে সোচ্চার, অভিবাসী ইস্যু নিয়েও তিনি সোচ্চার। এ ক্ষেত্রে কিছুটা প্লাস-মাইনাস হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তার নিজের স্বার্থ দেখে। তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Scroll to Top