মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে হওয়া মামলা চালিয়ে নেওয়ার জন্য ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে দাতাদের কাছে অর্থ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এখনো ঝুলে আছে সুতার সঙ্গে নির্বাচনের ফলাফল।
এর মধ্যেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। ট্রানজিশন কাজের জন্য ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করা হয়েছে। ট্রাম্পের মামলা মোকাবিলা করার জন্য ডেমোক্র্যাট প্রচারণা শিবিরের বিশাল আইনজীবী দল ঝাঁপিয়ে পড়েছে। রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে মামলার অর্থ ব্যয় সামাল দেওয়ার জন্য দাতাদের কাছে অর্থ চাওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা বিরল নয়। এবারে নির্বাচন মামলায় গড়াবে, এমন ধারণা আগে থেকেই করা হচ্ছিল। প্রচারের শুরু থেকেই ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করেছিল তাদের বিশাল আইনজীবী দল। প্রতিটি রাজ্যে নির্বাচন নিয়ে আইনগত বিষয় দেখার জন্য এসব আইনজীবী প্রস্তুত ছিলেন। রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষেও প্রতিটি রাজ্যে গঠন করা হয় ‘লইয়ার্স ফর ট্রাম্প’।
গত ১ অক্টোবরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকেন্দ্রিক ২৩০টি মামলা হয় বিভিন্ন ফেডারেল আদালতে। রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে শুধু নির্বাচনের দিনই বিভিন্ন রাজ্যে আরও কয়েক শ মামলা করা হয়েছে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগে থেকেই।
অনেক সময়ই এসব মামলার বিষয়বস্তু অন্যদের কাছে গুরুত্বের না–ও মনে হতে পারে। অ্যালাব্যামা রাজ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। তাঁর মামলার বিষয় ছিল, তিনি পারকিনসন রোগী এবং হাঁপানির অসুখে ভুগছেন। তাঁর ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনকেন্দ্রের বাইরে যেন ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট এ আবেদন খারিজ করে দেন।
ফ্লোরিডায় দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্তির আরেকটি আবেদন আদালতে বাতিল হয়। আলাস্কাতে একজন ভোটার এ মর্মে মামলা করেন, অনুপস্থিতি ভোটে ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য স্বাক্ষরদাতার উপস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করে।
আরকানসাসে আরেকটি আদালতে কোভিড-১৯ সংক্রমণে উদ্বিগ্ন বয়স্ক ভোটারদের জানালা দিয়ে ভোট দেওয়ার আদেশ দিতে হয়েছে আদালতকে একটি মামলার জের ধরে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ নভেম্বর বুধবার প্রকাশ্যে এসে কোনো বক্তব্য দেননি। উইসকনসিনের ভোট পুনরায় গণনার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানের ভোট গণনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে তাঁর প্রচার শিবির থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের মামলা–সংস্কৃতির চেনা মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্প যে এমন মামলা করবেন, এ নিয়ে আগে থেকেই বাইডেন শিবিরের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। বাইডেন শিবির থেকে তাদের আইনজীবীদের এসব মামলা মোকাবিলা করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনজীবীদের সঙ্গে নাগরিক সংগঠন এবং উদারনৈতিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান প্রতিটি রাজ্যে এসব মামলা মোকাবিলা করছে।
৪ নভেম্বর বুধবার বিকেলে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন রোনা ম্যাকড্যানিয়েল দলের দাতাদের সঙ্গে ফোন কনফারেন্স করেছেন। আদালতের মামলাগুলো দেখভালের জন্য দাতাদের কাছে অর্থ সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন এ ফোন কনফারেন্সে।
রিপাবলিকান প্রচার শিবিরের বরাত দিয়ে পলিটিকো অনলাইন জানিয়েছে, ট্রাম্প শিবিরে শেষ মুহূর্তে পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়ার ভোট গণনাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জনসমক্ষে উপস্থিত না হলেও টুইট করেছেন। টুইট বার্তায় ভোট গণনা নিয়ে তিনি আবারও অভিযোগ করেছেন। রিপাবলিকান পার্টির নেতারা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। এমন সব মামলা করে ট্রাম্পের সফল হওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন রিপাবলিকান লোকজন।