দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়েছে। এগিয়ে আসছে নির্বাচন। আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে এই রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু করোনার কারণে সেই ভোটের প্রচার অনেকটাই বন্ধ ছিল। এখন এই রাজ্যে করোনার প্রভাব কমে আসায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঠে নেমে পড়েছে নির্বাচনী ঝান্ডা হাতে। সবারই লক্ষ্য এক, জিততে হবে।
মমতার তৃণমূল চাইছে তৃতীয়বারের জন্য এই রাজ্যের ক্ষমতায় ফিরতে। বিজেপি চাইছে, মমতাকে সরিয়ে নতুন করে রাজ্যের দখল নিতে। আর এ নিয়ে দুই পক্ষই কোমর বেঁধে নেমেছে রাজনীতির ময়দানে।
এ কথা ঠিক, এই রাজ্যে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট বিভিন্ন নির্বাচনের একটি নির্ণায়ক শক্তি। এই মতুয়াদের এত দিন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে তৃণমূল। কিন্তু ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে মতুয়াদের গড় হিসাবে চিহ্নিত আসন ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। এই রাজ্যেরই ৪২টি লোকসভা আসনের ১৮টিতে জয়ী হয় বিজেপি। আর তৃণমূল জেতে ২২টি আসন। বিজেপি মতুয়া দুর্গ তছনছ করে দেওয়ায় ঘুম হারাম হয় তৃণমূলের। এখনো এই রাজ্যের ৪০টি বিধানসভা আসনের অনেকটাই নিয়ন্ত্রক মতুয়া ভোট।
তাই এই মতুয়া সম্প্রদায় সেই সঙ্গে এই রাজ্যের বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা উদ্বাস্তুদের ভোট করায়ত্ত করার জন্য ফের মমতা রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছেন। লক্ষ্য একটাই, মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের ভোট তাঁর চাই। তাই এই লক্ষ্যে মমতা গতকাল মতুয়া ও আদিবাসীদের নিয়ে রাজ্য সচিবালয় নবান্নে আয়োজিত এক বৈঠকে ঘোষণা দেন এই রাজ্যের ১ লাখ ২৫ হাজার উদ্বাস্তুদের জমির পাট্টা দেবে রাজ্য সরকার।
সেই লক্ষ্যে গতকাল ২৫ হাজার উদ্বাস্তুকে জমির পাট্টা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেন মমতা। শুধু তা–ই নয়, তিনি আরও ঘোষণা দেন রাজ্যের সব উদ্বাস্তু কলোনি আর উদ্বাস্তু কলোনি নয়, সবই স্বীকৃত। আর এই কলোনির সবাই এখন এ দেশের নাগরিক। তাঁদের আবার নতুন করে কিসের নাগরিকত্ব?
এদিকে বসে নেই বিজেপিও। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এই বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষণা দিয়েছেন, এবার রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হবে সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। বলেছেন, এই আইন সংসদে পাস হলেও করোনার কারণে তা এত দিন কার্যকর হয়নি। এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সেই আইন কার্যকর করা হবে। ফলে এ দেশে বাংলাদেশ থেকে আসা সব উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পাবেন।
এদিকে গতকাল রাতে দুদিনের সফরে কলকাতায় এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গতকাল রাতে কলকাতায় পৌঁছে নিউ টাউন রাজারহাটের একটি অভিজাত হোটেলে রাত কাটিয়ে আজ সকালে বাঁকুরায় যাবেন। সেখানে তিনি বিজেপি আয়োজিত সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি সিএএ নিয়ে কিছু বলবেন কি না, তা শোনার অপেক্ষায় রয়েছে রাজ্যের মতুয়া ও উদ্বাস্তুরা।