করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হোপ হিক্স করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডির করোনা পরীক্ষা করা হলে তাদের দেহে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়ে। খোদ ট্রাম্পই এক টুইট বার্তায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের দিকে নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার খবর দেন। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও এখনো শারীরিকভাবে ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন মেলানিয়া ট্রাম্প।
মার্কিন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বলেন, \’চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক মানুষকে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ আসার পর আমি এবং ট্রাম্প কোয়ারেন্টিনে আছি। আমরা এখনো ভালো বোধ করছি।\’
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক শন কনলিও প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্টলেডির ভালো থাকার খবর দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া সেই বিবৃতিতে কনলি বলেন, \’তারা দুজনই ভালো আছেন। তারা হোয়াইট হাউসে কোয়ারেন্টিনে আছেন।\’
প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্টলেডির চিকিৎসার বিষয়ে কনলি বলেন, \’হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক দল এবং আমি সবসময় তাদের ওপর নজর রাখছি। আমাদের দেশের নামকরা চিকিৎসক এবং চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে, আমি তাদের এ জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমি আশা করছি, এ রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন।\’
মার্কিন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, এ খবর যে বৈশ্বিক রাজনীতিকে দারুণ ঝাঁকুনি দিয়েছে। মাত্র একমাস পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই সময়ে ট্রাম্পের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ায় অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পুরো বিশ্বের মনোযোগ এখন সেই দিকে।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বয়স্কদের কষ্টই সবচেয়ে বেশি। ৭৪ বছর বয়সি ট্রাম্প সেই শ্রেণিতেই পড়েছেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট করোনাভাইরাসের জটিলতার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসকরাও। তারা বলেন, অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলো ট্রাম্পকে গুরুতর জটিলতায় ফেলেছে। চিকিৎসকদের মতে, বয়স এবং অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোভিড-১৯ ট্রাম্পের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ট্রম্পের উপদেষ্টা ৩১ বছর বয়সি হোপ হিক্স চলতি সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্পের সঙ্গে \’এয়ার ফোর্স ওয়ান\’-এ ভ্রমণ করেছিলেন। ট্রাম্প ওহিওতে গিয়েছিলেন একটি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিতে। গত মঙ্গলবার ক্লিভল্যান্ডে প্রেসিডেন্টের বিমান থেকে নামার সময় হিক্সের মাস্ক ছিল না। পরদিন বুধবার আর একটি নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নিতে হেলিকপ্টারে করে মিনেসোটায় যান ট্রাম্প। হিক্স সেখানেও ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন।
ভোট সামনে রেখে গত কয়েক সপ্তাহে নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সফরে যাচ্ছিলেন ট্রাম্প। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ট্রাম্প কোয়ারেন্টিনে চলে যাওয়ায় আগামী ১৫ অক্টোবর ফ্লোরিডার মিয়ামিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দ্বিতীয় টেলিভিশন বিতর্কের কী হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক মাস বাকি আছে।
তিনি হাজারো মানুষের ভিড়ের মধ্যে নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দিচ্ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই। যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেভাবে এই মহামারি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে, শুরু থেকেই তা নিয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছে ট্রাম্পকে।
নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে- \’ট্রাম্প দিনের পর দিন করোনাভাইরাসের এই সংকটকে খাটো করে দেখে আসছিলেন। বিজ্ঞানীদের কথায় পাত্তা না দিয়ে প্রায়ই তিনি বলছিলেন, এই ভাইরাস শেষ হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবারও এক ভোজসভায় তিনি বলেন, শিগগিরই মহামারির অবসান হতে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।\’
চিকিৎসকরা যেখানে সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন, সেখানে ট্রাম্প নিজে মাস্ক পরতে অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছেন। এমনকি মাস্ক যারা পরছেন তাদের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি।
এখন ট্রাম্পের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার এ খবর যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্ব সংকটের ঝুঁকি তৈরি করল এবং মহামারির সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। আগামী ৩ নভেম্বরের ভোট সামনে রেখে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প এখন আর সশরীরে নির্বাচনী প্রচারে থাকতে পারবেন না। হোয়াইট হাউসে কতদিন তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর তার অসুস্থতা যদি বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই জটিলতার মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দ্রম্নত বিশ্বনেতারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মহামারির শুরুর দিকে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তাদের সুস্থতা কামনা করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দ্রম্নত টুইটবার্তায় \’বন্ধু\’ বলে ট্রাম্পের আরোগ্য কামনা করেছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ট্রাম্প ও মেলানিয়ার দ্রম্নত আরোগ্য কামনা করে টুইট করেছেন। এছাড়া ট্রাম্পের আরোগ্য কামনা করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন, ওয়েলসের ফার্স্ট মিনিস্টার মাইক ড্রেকফোর্ডসহ আরও বহু রাষ্ট্রনেতা।
সূত্র : সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স