পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বিজেপিবিরোধী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আসার চেষ্টা করছেন ভারতের নতুন কৃষি আইনকে সামনে রেখে। গত ছয় মাস করোনা মহামারির আবহে রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বেশ কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলেন মমতা। ব্যস্ত ছিলেন করোনার গ্রাস থেকে রাজ্যবাসীকে দূরে রাখতে। দিল্লির বিজেপি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে কিভাবে করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করা যায়, সেদিকে নজর ছিল মমতার। কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতি বদলে গেল গত সোমবার। ভারতীয় পার্লামেন্টে গত রবিবার যেভাবে নতুন কৃষি আইন পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তীব্র বিরোধিতা শুরু করেছেন মমতা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় মমতা অভিযোগ করে জানান, কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে আইন পাস করিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং হিটলারের শাসনের মতো দেশ চালাচ্ছে বিজেপি।
এ কারণে রাজ্য তথা দেশবাসীকে এই বিলের বিরোধিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মমতা শুরু করেছেন আন্দোলন।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে সেই আন্দোলনে পথে নেমেছে মমতার দল তৃণমূল। ফেব্রুয়ারি মাসে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শেষবার পথে নেমেছিল তৃণমূল। তারপর এই প্রথম মমতার দল আবার রাস্তায় নামছে আর তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল সরগরম।
তৃণমূল নেতা পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের সব অধিকার কেড়ে ভুঁইফোড় এবং জোতদারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের এই আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চলবে।
মমতার রাজনীতিতে কৃষকদের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে কৃষকদের জমি বাঁচানোর লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই মমতা পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটান।
এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, যদিও মমতা বারবার নতুন কৃষি আইনের বিরোধিতার কথা বলছেন, তাঁর আসল লক্ষ্য হলো- পশ্চিমবঙ্গের আগামী বছরের ভোট। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটযুদ্ধে মমতার লড়াই বিজেপির সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ কৃষিপ্রধান রাজ্য। বিজেপি কৃষকবিরোধী প্রমাণ করতে পারলে তৃণমূলের পক্ষে লড়াই অনেক সহজ হয়ে যাবে।
তাই বিজেপির বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন মমতা। কারণ এই নতুন কৃষি আইন নিয়ে বিজেপি কিছুটা বেকায়দায়। তাদের সহযোগী বেশ কিছু দল ইতিমধ্যে এই নতুন আইনের বিরোধিতা শুরু করেছে।
বিজেপিবিরোধী রাজনীতির একটা নতুন আবহ হঠাৎ করে তৈরি হয়েছে সারা দেশে। এই নতুন কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে মমতা সেই আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপিবিরোধী হাওয়া তৈরি করতে চাইছেন পশ্চিমবঙ্গে, বলেন ওই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।