মহামারী করোনা তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য চীনকে দোষারোপ করেছেন। তিনি মহামারি পরিস্থিতির জন্য চীনকে জবাবদিহি করার দাবি জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোনো দেশের সঙ্গে শীতল যুদ্ধে জড়ানোর কোনো অভিপ্রায় তাঁর নেই।
জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিউইয়র্কে এ বছর বড় আকারে ভার্চ্যুয়াল অধিবেশন হয়েছে। বিশ্বনেতারা সেখানে আগে রেকর্ড করা বক্তব্য দিয়েছেন।
চীন বিশ্বকে সংক্রমিত করেছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যারা বিশ্বে মহামারি ছড়িয়েছে, তাদের কাছ থেকে অবশ্যই জবাবদিহি আদায় করতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে চীন অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে ভ্রমণ বন্ধ রাখে। তবে বিভিন্ন ফ্লাইট চীন ছেড়ে অন্য দেশে যায়। এভাবে সংক্রমণ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্পের রেকর্ডকৃত বক্তব্যের খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ট্রাম্প করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য বেইজিংকে বারবার অভিযুক্ত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁরা চাইলে করোনার সংক্রমণ বন্ধ করে পারত।
আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে: সি চিন পিং
ট্রাম্পের বক্তব্যের পরই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘সভ্যতার সংকটের’ ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনার মাধ্যমে বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, বৈশ্বিক যেকোনো বিষয়ে আধিপত্য বিস্তার, অন্যের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ এবং অন্য কোনো দেশের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার অধিকার কোনো দেশের নেই। বৈশ্বিক যেকোনো বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকাকে সমর্থন করে তাঁর দেশ। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের কর্তৃত্ববাদকে খারিজ করে দিয়েছেন তিনি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে সি চিপ পিং বলেন, কর্তৃত্ববাদ বিলীনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর উচিত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানো।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় এ পর্যন্ত দুই লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর এই হার সবচেয়ে বেশি। তবে ট্রাম্প করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে ততটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাণিজ্য, প্রযুক্তি, জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি আচরণ প্রভৃতি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
১৯৪৫ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রথমবারের মতো ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। অধিবেশনে ১১৯টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ৫৪টি দেশের সরকারপ্রধান ভাষণ দেবেন, যা চলবে ২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে এর বাইরেও বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে, এবারের অধিবেশনে ৮০টির বেশি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসব বৈঠকে আলোচনার মূল কেন্দ্রে থাকবে করোনার মহামারি। এ নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে এই বৈঠক হবে।
সাধারণ পরিষদের বিশেষ বৈঠকে বৈশ্বিক যেকোনো বিষয়ে আধিপত্য বিস্তার রোধ, করোনা মহামারি মোকাবিলাকে গুরুত্ব এবং জাতিসংঘের কাঠামোর সংস্কার চেয়েছেন বিশ্বনেতারা। করোনাভাইরাস মোকাবিলা প্রসঙ্গে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, করোনাভাইরাসকে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। এই মহামারি বিশ্বের নড়বড়ে অবস্থাকে দেখিয়ে দিয়েছে।