ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক বিরোধ অনেক পুরনো। প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক বিরোধ মাঝে মাঝে রাজনীতির মাঠ ছাড়িয়ে ব্যবসার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। সম্প্রতি বাসমতি চাল নিয়ে নতুন করে বিরোধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। সম্প্রতি দিল্লি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) বাজারে রফতানি করা বাসমতি চালের জন্য এক্সক্লুসিভ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) ট্যাগ চেয়ে আবেদন করেছে জোটটির কাছে। আবার পাকিস্তান মনে করছে, এ কাজটা ভারতের উচিত হয়নি কারণ বাসমতি চাল শুধু ভারতীয় পণ্য নয়। বরং পাকিস্তানেও ভালো মানের বাসমতি চাল উৎপাদন হয় ও দেশটি থেকে রফতানিও হয়। ভারত যদি জিআই ট্যাগ পায় তবে ইউরোপের বাজারে পাকিস্তান থেকে বাসমতি চাল রফতানিতে রীতিমতো ধস নামতে পারে। ইউরোপের বাজারে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই বাসমতি চাল রফতানি করে। তবে এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান পাকিস্তানের তুলনায় অগ্রগণ্য। ভারত সরকার নিজেদের অবস্থান আরো পোক্ত করতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) কাছে রফতানিযোগ্য বাসমতি চালের জিআই ট্যাগ চেয়ে আবেদন করেছে। ভারত এ ট্যাগ পেলে ইইউর আমদানিকারকরা জিআই ট্যাগযুক্ত ভারতীয় বাসমতি চাল আমদানি বাড়িয়ে দেবেন বলে আশা দিল্লির।
আবেদনে ভারতের উল্ল্যেখ করেছে, বাসমতি ভারতীয় উপমহাদেশের স্বতন্ত্র একটি চাল। যাহা দেখতে লম্বাটে এবং এর অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য ভারতীয় বাসমতির খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। সবচেয়ে ভালো মানের বাসমতি চাল উৎপাদন হয় হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল, বিশেষত ইন্দো-গাঙ্গেয় প্রান্তরে। সেই বিবেচনায় ভারত বাসমতি চালের উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলকে চিহ্নিত করেছে।
আর এখানেই আপত্তি পাকিস্তানের। পাকিস্তানের চাল রফতানিকারকরা বলছেন, বাসমতি শুধু ভারতের পণ্য নয়। পাকিস্তানেও ভালো মানের বাসমতি চাল উৎপাদন হয়। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তানের বাসমতি চালের খ্যাতিও ইউরোপে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যদি ভারত জিআই ট্যাগ পেয়ে যায়, তবে পাকিস্তান থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) বাজারে বাসমতি চাল রফতানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এজন্য পাকিস্তানি রফতানিকারকরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারতীয় আবেদন খণ্ডাতে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দেশটির প্রভাবশালী রফতানিকারক ও রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তানের (আরইএপি) মুখপাত্র তওফিক আহমেদ বলেন, পাকিস্তানের রফতানি খাতে বড় ধাক্কা নেমে আসার আগেই ভারতীয় আবেদনের বিরুদ্ধে আপিল করা জরুরি। তা না হলে পাকিস্তানিরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) বাজারে বাসমতি চাল রফতানি বন্ধ করতে বাধ্য হবেন। তওফিক আহমেদ আরো বলেন, পণ্যের জিআই ট্যাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যেটা পণ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। পশ্চিমা ক্রেতারা জিআই ট্যাগহীন পণ্য কিনতে চান না। তাই বাসমতি চালের জিআই ট্যাগ ভারত পেলে পণ্যটির বাজারে দেশটির আধিপত্য আরো জোরদার হবে। পাকিস্তান থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) বাজারে বাসমতি চাল রফতানিতে ধস নামবে। এখন আর এটা ফেলে রাখার মতো বিষয় নয়। বরং উপলব্ধি করে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলোর কাছে নাস্তানাবুদ হবে পাকিস্তানের বাসমতি চাল রফতানি।
ভারতীয় এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানাবে বলে নিশ্চিত করেছে। শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাসমতি চালের বাজার ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
: দি ট্রিবিউন