যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গ্রহন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। আন্তর্জাতিক একটি বিশেষ মহল কর্তৃক ভোটের ফলাফল ছিনতাই অথবা বানোয়াট তথ্য ছেড়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার যে শঙ্কা করা হচ্ছে, তা প্রতিরোধকল্পে জো বাইডেন টিমের পক্ষ থেকে বিশেষ একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে বিদেশী হস্তক্ষেপ ঘটেছিল বলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও উল্লেখ রয়েছে। এবারও তেমন হস্তক্ষেপের আশঙ্কা ইতিমধ্যেই প্রধান দুই দলের পক্ষ থেকেই উঠেছে। গত নির্বাচনের মত রাশিয়া পুনরায় ট্রাম্পকে বিজয়ী করার ফন্দি এঁটেছে বলে ডেমক্র্যাটরা অভিযোগ করেছেন এবং ট্রাম্পের পক্ষে চীনের ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ আমেরিকানদের ব্যালট যুদ্ধকে বিদেশিরা নিয়ন্ত্রণ করবে নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে-এটি প্রায় স্পষ্ট।
এ জন্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের প্রচার কমিটির শীর্ষ পর্যায় থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার গণমাধ্যমকে বলা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ একটি পদক্ষেপ হবে নির্বাচনের ফলাফল ছিনতাই রোধকল্পে এই পদক্ষেপটি। আর এই টিমের সার্বক্ষণিক উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেছেন নির্বাচন সম্পর্কিত আইনজীবী বব বাউয়ের। ডেমক্র্যাটিক পার্টির পক্ষে আগে সকল আইনগত লড়াইয়ে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বাউয়ের এ প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রতিটি ভোটার তার অধিকার স্বাচ্ছন্দ্যে প্রয়োগ করতে পারেন এবং প্রদানকৃত ভোট যথাযথভাবে গণনায় আসবে-এমন ব্যবস্থা নিশ্চিতে ডেমক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় টিমে বিশেষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক রয়েছেন।
গত কদিন থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত মন্তব্য করছেন। আগাম ভোট প্রদানকারিদের কেন্দ্রে গিয়ে আবারও ভোট প্রদানের জন্যে প্রকাশ্যে আহবান জানিয়েছেন ট্রাম্প-যা একেবারেই বেআইনি ও ভোট জালিয়াতির ষড়যন্ত্রের সামিল-অভিযোগ নির্বাচন বিশেষজ্ঞগণের।
সাবেক সলিসিটর জেনারেল ডোনাল্ড ভেরিলী এবং ওয়াল্টার ডেলিঙ্গার ছাড়াও ল’ ফার্ম পার্কিং কোইয়ির এটর্নি মার্ক ইলিয়াসও ডেমক্র্যাটিক পার্টির পক্ষে সক্রিয় থাকবেন যে কোন ধরনের জালিয়াতি অথবা ভোট ডাকাতি প্রতিরোধে। সাবেক এটর্নি জেনারেল এরিক হুল্ডারকেও এই পর্যবেক্ষণ টিমে রাখা হয়েছে।
জো বাইডেন প্রচার টিমের আইনগত পরামর্শদাতা ডানা রিমোজ বলেছেন, আসছে ৩ নভেম্বর অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর। এজন্যে সবধরনের ব্যবস্থা অবলম্বন করা হচ্ছে ডেমক্র্যাটিক পার্টির পক্ষ থেকে। ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন এবং ডাকযোগে প্রেরিত ব্যালটগুলো যথাযথভাবে গণনার আওতায় আসবে-এমন সকল বিষয়ে এ টিম সার্বক্ষণিক নজর রাখবে।
এদিকে সোমবার ভাচুয়ালে নির্বাচনী তহবিল গঠনের সমাবেশে জো বাইডেন অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থাকে ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত ফায়দা অর্জনের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন। আগে কখনো এমন নগ্নভাবে বিচার ব্যবস্থাকে কোন প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন বলে শুনিনি। কিন্তু বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিচার ব্যবস্থার মান-মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন-যা কারো জন্যেই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
এমন অব্যবস্থাপনা-অরাজকতাকে চলতে দেয়া সমীচিন নয় এবং আমরা নভেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। আইনের শাসনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম সর্বজনবিদিত ছিল, সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন ট্রাম্প। এধরনের অপতৎপরতায় সায় প্রদানকারি সকলকে বরখাস্ত করা হবে। এটি করতে হবে সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস সোমবার হাসপাতাল কর্মীদের এক ভার্চুয়াল সমাবেশে বলেছেন, বাইডেনকে জয়ী করা হলে অভিবাসনের রীতি ঢেলে সাজানো হবে। কাগজপত্রহীনদের বৈধতা প্রদান করা হবে। কর্মস্থলে গ্রেফতার অভিযান নিষিদ্ধ করা হবে।
উল্লেখ্য, হাসপাতালসহ অত্যাবশ্যকীয় সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিদের সমন্বয়ে গঠিত শ্রমিক ইউনিয়ন ‘ইউনাইট হিয়ার’র এই সমাবেশে মূলত লাতিন শ্রমিক-কর্মচারির সংখ্যা ছিল বেশি। তাদের দাবি হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমী কাগজপত্রহীনদের গ্রিনকার্ড প্রদানের বিধি করতে হবে। করোনাভাইরাসের মহামারিকালে যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
প্রসঙ্গত নেভাদা, আরিজোনা, ফ্লোরিডা এবং মিশিগান স্টেটের ভোটের ওপরই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ভর করছে গত কয়েক বছর যাবত। এসব স্টেটের হাসপাতাল-নার্সিং হোম-পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মচারিরাই ইউনাইট হিয়ারের সাথে জড়িত। তারা আগে থেকেই কমলা হ্যারিসকে বাইডেনের রানিংমেট হিসেবে চাচ্ছিলেন। সেজন্যে কমলা হ্যারিসও সেই শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি পূরণের অঙ্গীকার করলেন।