উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে নিয়ে গুঞ্জন যেন থামছেই না। গত কয়েক দিন ধরেই তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর এক গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি গুঞ্জন ছড়ায় কিম মারা গেছেন। এটি ছিল রয় ক্যালে নামে এক সাংবাদিকের দাবি।
শনিবার সেই গুঞ্জনের আগুনে ঘি ঢাললেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক সাবেক কূটনীতিক। বলেছেন, কোমায় চলে গেছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম।
আর এ কারণেই এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিচ্ছেন তার ছোট বোন কিম ইয়ো জং। তার এই দাবি ফলাও করে ছাপা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কিন্তু আসলে সত্যটা কী? উত্তর কোরিয়ায় সব কিছু এত গোপন রাখা হয় যে, দেশের লোকেরাও বাস্তবটা জানতে পারেন না।
কয়েক মাস আগে কিম মারা গেছেন বলে খবর প্রকাশ হলে দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় হয়েছিল। তখন তড়িঘড়ি তার কিছু ছবি প্রকাশ করে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম। সেগুলো দেখিয়ে দাবি করা হয়, কিছুই হয়নি। কিন্তু ৩৬ বছর বয়সী এই স্বৈরতন্ত্রীকে এপ্রিল মাসের পর থেকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
গত ১১ এপ্রিল একটি সরকারি অনুষ্ঠানে শেষ দেখা গিয়েছিল কিমকে। তারপর থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। মাসখানেক আগেও খবর ছড়ায়, কিম কোমায় চলে গেছেন। উত্তরসূরি হিসেবে সব কাজ সামলাচ্ছেন তার বোন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা কিমের বেশ কয়েকটি ‘ছবি’ও ছড়িয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পিয়ংইয়ং তখন জানিয়েছিল, এই সব জল্পনা ভুয়া। কিমের একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল, তবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ।
এর কয়েক দিনের মাথায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে কিমের ফিতে কাটার ছবি প্রকাশ করে সে দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম। এত জল্পনার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দাবি করেছিলেন, তিনি মনে করেন কিম সুস্থ আছেন।
কিন্তু চাংয়ের দাবি, কোমাতেই রয়েছেন কিম। এত দিন কিমের সুস্থ থাকার প্রমাণ হিসেবে পিয়ংইয়ং যে সব ছবি প্রকাশ করেছে সেসবই নকল। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কিম দে জাংয়ের প্রাক্তন সহকারী ছিলেন চাং। চীনের কিছু কর্মকর্তার কাছে কিমের কোমায় থাকার খবর সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তার বক্তব্য, কিমের অবর্তমানে দেশ কীভাবে চলবে, সেই সংক্রান্ত প্রশাসনিক সব দায়িত্ব এখনও ভাগ হয়নি। তাই আপাতত আন্তর্জাতিক বা দেশের সব অনুষ্ঠানেই তার বোনকে যেতে দেখা যাচ্ছে। পাল্টা কোনও বিবৃতি এখনও দেয়নি পিয়ংইয়ং।
কিম জং উনের পর উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থায় ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ধরা হয় তার বোন কিম ইয়ো জংকে।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের প্রতিনিধিরা একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন। বোনের হাতে কিমের ক্ষমতা হস্তান্তর ছিল সেই বৈঠকের আলোচনার বিষয়।
বৈঠকের পর দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ‘কিম ইয়ো জং, ওয়ার্কার্স পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির ভাইস ডিপার্টমেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে রাষ্ট্র সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা করছেন। যদিও ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ এখনও তার ভাইয়ের হাতেই রয়েছে।’
নিজের ‘চাপ কমাতেই’ নাকি বোনের হাতে কিছু ক্ষমতা তুলে দিচ্ছেন কিম, জানানো হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সেই রিপোর্টে।
গত কয়েক মাস ধরে জনসমক্ষে অনুপস্থিতি কিমকে নিয়ে জল্পনা বেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। এপ্রিলে ছড়ায়, হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের সফল না হওয়ায় গুরুতর অসুস্থ কিম।
তার মৃত্যুর একটি ‘ভুয়া’ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় জোরদার হয়েছিল জল্পনা। কিমের দাদা ও উত্তর কোরিয়ার সাবেক শাসক কিম ইল সাং’র জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে কিমের অনুপস্থিতি এ জল্পনার পারদ আরও চড়ে।
কিন্তু উত্তর কোরিয়া প্রশাসন এ নিয়ে খোলসা করে কখনই কিছু জানায়নি। উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ দাবি করেছিল, মে দিবস উপলক্ষে রাজধানী পিয়ংইয়ং-এর কাছে সানচনে গিয়েছিলেন কিম। সেখানে একটি সার কারখানার উদ্বোধন করেন তিনি।
তবে দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তা চ্যাংয়ের এই সাম্প্রতিক দাবি কতখানি ঠিক- তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলে।