প্রাণঘাতী করোনার টিকা উৎপাদন করে ফেলল রাশিয়া

মহামারী করোনাভাইরাস ঠেকাতে আলোচিত টিকা উৎপাদন করে ফেলল রাশিয়া। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, তাদের টিকাটির প্রথম ব্যাচ গতকাল শনিবার উৎপাদন করা হয়েছে। টিকা উৎপাদনের কয়েক ঘণ্টা আগে এটি উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দেয় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কার্যকর টিকা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। এর মধ্যে দ্রুতগতিতে টিকার অনুমোদন দিয়ে ফেলেছে রাশিয়া। কিছু বিজ্ঞানীর আশঙ্কা, মস্কোর পক্ষ থেকে দ্রুত টিকা অনুমোদনের বিষয়টিতে নিরাপত্তার চেয়ে দেশের সম্মানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়া বলছে, তারা যে টিকা তৈরি করেছে এবং উৎপাদন পর্যায়ে গেছে, তা এ মাসের শেষ দিকে সরবরাহ শুরু হবে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ না হলেও রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকাটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি মানবদেহে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাও গড়ে তুলতে পেরেছে। টিকাটি উদ্ভাবন করেছে রুশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সহযোগিতা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

টিকাটির কার্যকারিতা পরীক্ষার ক্ষেত্রে তৃতীয় ধাপের মানবপরীক্ষা যেখানে হাজারো স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রয়োগ করা হয়, তা অনুসরণ করা হয়নি। নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে নিরাপদ টিকার অনুমোদন পেতে হলে এ পরীক্ষাকে প্রয়োজনীয় বলে ধরা হয়। রাশিয়ার টিকা অনুমোদন পেলেও এর বিস্তৃত পরীক্ষা হয়নি বলে তাদের দাবি সম্পর্কে গবেষকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার টিকার বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।

রাশিয়ার টিকাটির নাম ‘স্পুটনিক ৫’, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নামে নামকরণ করা করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, টিকাটি নিরাপদ। রাশিয়ার তৈরি টিকা নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে একে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। দেশটির জাতীয় টেলিভিশনেও একে নিরাপদ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। পুতিন বলেন, তাঁর এক মেয়ের শরীরেও টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে।

ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগে টিকা প্রস্তুতকারক গামেলিয়া ইনস্টিটিউট জানায়, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি নাগাদ ৫০ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে রাশিয়া।

রাশিয়ার তৈরি করা প্রথম ব্যাচের টিকাগুলো চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হবে। এরপর তা সাধারণ জনগণের ব্যবহারের জন্য ছাড়া হবে। ইকোনমিক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পরীক্ষা ও জনগণের ওপর প্রয়োগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে।

গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান আলেক্সান্ডার গিনটসবার্গ বলেছেন, কয়েক দশকের পুরোনো ব্যাপক গবেষণালব্ধ বৈজ্ঞানিক প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে টিকাটি তৈরি। টিকাটির নাম ‘গাম-কোভিড-ভ্যাক’। দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা পেতে টিকাটির দুটি ডোজ ইনজেকশন পুশ করতে হয়। টিকার দুটি ডোজের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এতে ব্যবহৃত অ্যাডেনোভাইরাস, যা শরীরের কোষে টিকাটি পৌঁছায়। সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পেতে দুই বা তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ডোজ দিতে হয়।

টিকাটির নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে, এটি ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের জন্য উপযুক্ত এবং অন্য অ্যান্টিজেনের সঙ্গেও দেওয়া যাবে।

টিকা গ্রহীতাকে চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাঁরা শরীরের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য জানাবেন। সম্ভাব্য কোনো জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের একটি দলকে রাশিয়ার করোনাভাইরাসের টিকা সম্পর্কে জানাতে মস্কোর ল্যাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

স্পুটনিক-৫ টিকা তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান নির্বাহী কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেছেন, ‘আমরা কাউকে টিকা নিতে জোর করছি না। আমরা রাশিয়াতেই টিকাটি দেব। আমরা শুধু প্রযুক্তির কথাটাই তুলে ধরতে চাই। আমরা দেখেছি, অনেক দেশ এটা পরীক্ষা করতে চায়। আবার অনেক দেশ ঈর্ষান্বিত। পরীক্ষার ফল না জানানোর কারণে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ করছেন। আগস্টের শেষ নাগাদ প্রাণীর ওপর পরীক্ষা, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল জানানো হবে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাও শুরু হচ্ছে।’

কিরিল বলেছেন, ‘মানুষ মারা যাচ্ছে। তাদের রক্ষা করতে চাই। ক্লিনিক্যাল ও মানুষের জন্যই এখন টিকা প্রয়োজন। এ টিকা তৈরিতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তা অতীতেও নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। টিকাটি রাশিয়ার আইন মেনেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর তুলনায় এমআরএনএ টিকা বরং অকার্যকর প্রমাণ হয়েছে। ওই টিকাকে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা পার হতে হবে।’

Scroll to Top