বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে ১৯৭৬ সালে যে ট্রানজিট চুক্তি হয়েছিল, সেটি সংশোধন করে রেলপথে নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সংশোধনীর প্রস্তাব অনুমোদন পেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহানপুর থেকে ভারতের সিঙ্গাবাদ হয়ে নেপালের বীরগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথে পণ্য পরিবহন সুবিধা চালু হবে। দুই দেশের মধ্যে এই ট্রানজিট সুবিধা চালুর জন্য রোহানপুরকে নতুন ‘ট্রানজিট এন্ট্রি অ্যান্ড এক্সিট পয়েন্ট’ ঘোষণা করার একটি প্রস্তাব আজ মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে যে ট্রানজিট চুক্তি হয় ১৯৭৬ সালে, সেখানে দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ৬টি রুটকে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। তবে ওই রুটগুলোর মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে দূরত্ব বেশি হওয়ায় নেপালের জন্য ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। ফলে দেশটি দীর্ঘদিন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহানপুর দিয়ে রেলপথে পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট সুবিধা চেয়ে আসছিল।
এখন ভারতের সম্মতি পাওয়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহানপুর রেলস্টেশনকে প্রচলিত ৬টি রুটের অতিরিক্ত নতুন আরেকটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ট্রানজিট চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব যাচ্ছে মন্ত্রিসভায়। জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে পণ্য পরিবহনে যে ৬টি প্রটোকল রুট রয়েছে তার মধ্যে বিরল-রাধিকাপুর দিয়ে পণ্য পরিবহনে ৫১৪ কিমি. এবং বেনাপোল দিয়ে নেপালের বীরগঞ্জ পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে প্রায় ৮০০ কিমি. পথ অতিক্রম করতে হয়।
নতুন ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ অনুমোদন পেলে এই পথে নেপালের বীরগঞ্জ পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে সর্বমোট দূরত্ব দাঁড়াবে ২১২ কিমি.। দূরত্ব কমে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে নেপালের খরচ এক তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, রেল ট্রানজিটটি বাস্তবায়িত হলে বঙ্গোপসাগর দিয়ে পণ্য আমদানি করে মোংলা বন্দরে খালাসের পর সেটি খুলনা হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহানপুর স্থলবন্দরে আনতে চায় নেপাল। এতে নেপালের পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমার পাশাপাশি মোংলা বন্দর ব্যবহারের চার্জ ও মাশুল ছাড়াও রোহানপুর পর্যন্ত দেশীয় যান ব্যবহার করে নেপালি পণ্য পরিবহন বাবদ অর্থ পাবে বাংলাদেশ।
সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে নেপালের আমদানি-রপ্তানির একটি বড় অংশ চলছে ভারতের হলদিয়া বন্দর দিয়ে। তবে এতে দূরত্ব ও আর্থিক খরচ বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে রেলপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ১৯৯৯ সালে প্রস্তাব দেয় নেপাল। তবে এ ধরনের ট্রানজিট সুবিধা চালুর ক্ষেত্রে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ ব্রডগেজ রেলপথ লিংক নেপালের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে সম্মতি দেয় ভারত।
আর এতেই সুযোগ সৃষ্টি হয় ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে নেপালের সঙ্গে রেলপথে ট্রানজিট যোগাযোগ কার্যকর করার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ নেপালে ৩৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ১৮ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।
বাংলাদেশ এখন পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, তৈরি পোশাক, টয়লেট্রিজ পণ্য, ওষুধসহ বেশকিছু পণ্য নেপালে রপ্তানি করছে। উভয় দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে রেলপথে ট্রানজিট সুবিধা কার্যকর হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে।