লাদাখ সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যখন প্রচণ্ড উত্তেজনা চলছে তখন ভারত এবং চীনের সামরিক কমাণ্ডার বৈঠক করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে ইরানের ইংরেজি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল প্রেসটিভি এ খবর দিয়েছে। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হলো।
খবরে বলা হয়েছে, বিতর্কিত আকসাই চীন-লাদাখ সীমান্তের লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলে চীনের অভ্যন্তরে দুপক্ষের কমান্ডারা আজ (সোমবার) বৈঠকে বসেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দু পক্ষের নিচের পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। তবে বৈঠক হলেও আপাতত পিছু হটছে না চীন।লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত এবং চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রায় ছয় সপ্তাহের উত্তেজনার পর প্রথমবারের মতো এই সঙ্কটে পাকিস্তানকে জড়িয়ে ভারতের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।
চীন সরকারের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস পাকিস্তানে চালানো ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা উল্লেখ করে দেশটিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, পাকিস্তান এবং অন্যান্য প্রতিবেশিদের সঙ্গে যা করে ভারত, চীনের সঙ্গে তা করা উচিত হবে না।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এবং সেপ্টেম্বরে উড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় সৈন্যদের প্রাণহানির ঘটনার প্রতিশোধে পাকিস্তান অধিকৃত-কাশ্মীরে চালানো ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা উল্লেখ করে চীনের ক্ষেত্রে একই পথে হাঁটা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে গ্লোবাল টাইমস।
চীনের বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মন্তব্যের বরাত দিয়ে গ্লোবাল টাইমস ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বেইজিংয়ের সঙ্গে একই ধরনের কোনও কিছু করা হলে তা ধ্বংসাত্মক ফল ডেকে আনবে।
সাংহাইয়ের ফুদান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাইথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক লিন মিনওয়াং বলেছেন, ভারতে উত্তপ্ত জাতীয়তাবাদ দেখতে পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু চীনের সঙ্গে আরও উত্তেজনা তৈরিতে এ ধরনের জাতীয়তাবাদ ভারতের নীতি নির্ধারণকে হাইজ্যাক করবে কিনা; সেটি নিয়ে আমাদের চিন্তা করার দরকার নেই।
তিনি বলেন, ভারত যখন পাকিস্তান এবং অন্যান্য প্রতিবেশিদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তখন নয়াদিল্লিকে প্রকৃত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জাতীয়তাবাদ তাড়িত করতে পারে। কিন্তু এটি যখন চীনের ক্ষেত্রে আসে, তখন এটি ভিন্ন গল্প।
বেইজিংয়ের সামরিক বিশেষজ্ঞ ওয়েই ডংজু শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় বৈঠকে করা মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছেন। ওয়েই ডংজু বলেন, ভারতীয় সামরিক বাহিনী প্রয়োজনীয় যেকোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে মোদি যে মন্তব্য করেছেন তা দেশের জনগণকে সন্তুষ্ট এবং সৈন্যদের মনোবল বাড়ানোর কৌশল হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন রাতে কাশ্মীর লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্তত ২০ সৈন্য নিহত হয়। এছাড়া এতে আহত হয় আরও ৭০ জনের বেশি। যদিও চীন ওই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনও সৈন্য হতাহত হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার করেনি। বেইজিংয়ের দাবি, চীনের সক্ষমতা শুধুমাত্র সামরিক ক্ষেত্রেই নয় বরং সব ক্ষেত্রেই। আন্তর্জাতিক প্রভাবের দিক থেকে ভারতের চেয়ে অনেক ওপরে আছে চীন। চীনের সরকারি এই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনটির শিরোনাম করা হয়েছে, ভারত জানে- চীনের সঙ্গে যুদ্ধে পারবে না তারা।