বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলের লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষে ভারতীর সেনার নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে। সেইসঙ্গে ভারতের আরও ১১০ জন সেনা গুরুতর আহত হয়েছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের। এদিকে ভারতের দাবি দুই পক্ষের সংঘর্ষে চীনের অন্তত ৪৩ জন সেনা নিহত হয়েছেন।
সোমবার গভীর রাতের ঘটনা। লাদাখের সুউচ্চ পর্বতমালায় গালওয়ান নদীর পূর্ব পার ধরে পেট্রোলিংয়ে বেরিয়েছিল ভারতীয় সেনার বিহার রেজিমেন্টের একটি পেট্রোলপার্টি। তাদের সঙ্গেই চীনের সেনার তীব্র সংঘাত হয়।
গালওয়ানে যেভাবে হাতাহাতি হয়েছে তা একেবারে অন্য ধরনের সংঘর্ষ, ইদানীং কালের হাইটেক সংঘর্ষের সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না। নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে ভারতীয় সেনার দ্বন্দ্বে দেখে থাকি, প্রথমে স্মল আর্মস ব্যবহার করা হয়, তারপরে একেএকে আসে মেশিনগান, মর্টার, এবং অন্যান্য সব কিছু। এখানে তা হয়নি।
ভারতীয় সেনা ও চীনা সৈন্যরা পরস্পরের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আমার কাছে যতদূর তথ্য আছে, তাতে গালওয়ান উপত্যকায় ঘটা এই হাতাহাতিতে চীনা সৈন্যরা ব্যবহার করেছে লোহার রডের উপরে বসানো লোহার তৈরি ধারালো নখের মতো একটা অস্ত্র, যা ক্লোজড কমব্যাটে বহু দূর থেকে বিপক্ষকে আঘাত করতে পারে। দু’তরফেই ছোড়া হয়েছে পাথর। ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বেয়োনেটও। বেশি উচ্চতায় অক্সিজেন সমস্যার মধ্যে বেশিক্ষণ হাতাহাতি করাটাও খুব কষ্টকর, এতে প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বলছিলেন ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য।
১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পরে ১৯৬৭ সালে সিকিমে নাথুলার কাছে ফের দুই পক্ষ তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাতে দুই পক্ষের বহু সেনার মৃত্যু হয়। ১৯৭৫ সালে অরুণাচলে ফের দুই পক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে অরুণাচল সীমান্তে। সেই ঘটনাতেও দুই পক্ষের বেশ কিছু সৈন্য নিহত হন। এর পর ২০১৭ সালে ডোকালমে ভারতীয় এবং চীনা সেনা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। পাথরবৃষ্টিও হয়। কিন্তু কারও মৃত্যু হয়নি। এ বছরেও সিকিম এবং লাদাখে দুই পক্ষ একাধিকবার হাতাহাতিতে জড়িয়েছে। তবে সোমবার রাতের ঘটনা নজিরবিহীন বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।