মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের মধ্যে যখন বাকযুদ্ধ চলছে, তার মাঝে কেমন আছে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ঐ দেশটির সাধারণ মানুষ?
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওয়েবসাইট নর্থ কোরিয়া নিউজের একদল সাংবাদিক সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন সেখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা দেখতে।
ওনসান শহরের কাছে উলিম জলপ্রপাতের কাছে পিকনিক করছে এই উত্তর কোরিয়ানরা। নানা ধরনের খাবারের সঙ্গে তারা ক্যারিওকি মেশিনে গানের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন। উত্তর কোরিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না এদের মধ্যে।
শিশুদের ক্যাম্পে এই ছাত্রছাত্রীরা যে রঙিন স্পোর্টস সুট পরেছে, খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেখানে রয়েছে নাইকি এবং অ্যাডিডাসের মতো পশ্চিমা পোশাকের ব্র্যান্ড। এগুলো সম্ভবত নকল। আর এই ছেলেমেয়েরা সে সম্পর্কে যে খুব একটা সজাগ, তাও ঠিক পরিষ্কার না।
বিশাল আকৃতির এই প্যাসেঞ্জার ফেরি এক সময় ওনসান এবং জাপানের নিগাতা বন্দরের মধ্যে চলাচল করতো। কিন্তু ২০০৬ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এই ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এত বছর পরও এই ফেরির ক্রুদের চাকরি বজায় আছে।
ঝিনুক উত্তর কোরিয়ায় খুবই জনপ্রিয় খাবার, বিশেষভাবে উপকূলবর্তী এলাকায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই খাবার খাওয়ার কোন অধিকার ছিল না। কেননা ঝিনুক রপ্তানি করে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো। কিন্তু আগস্টে জাতিসংঘের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার পর উত্তর কোরিয়া থেকে সব ধরনের সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মানুষ এখন ঝিনুকের স্বাদ নিতে পারছে।
এক সময় জাপান এবং চীন থেকে আমদানি করা প্রচুর ইলেকট্রিক সাইকেল দেখা যেত রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ। কিন্তু এখন ছোটছোট শহরেও এই সাইকেল দেখা যায়।
এর মানে হলো, ধীরে হলেও উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতির সুফল গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছুতে শুরু করেছে। কিন্তু পরিবহন সমস্যা এখনও প্রকট।
এখানে দেখা যাচ্ছে, হামহুং শহরে এই গরুটানা গাড়িতে কার্ডবোর্ড নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রিসাইক্লিং কেন্দ্রে।
উত্তর কোরিয়ার জীবনযাত্রা তার মতো করে চললেও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নানা জায়গায় লক্ষ্য করা যায়। কোথাও কোথাও পেট্রল পাম্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেসং শহরের এই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ সঙ্কটের জন্য লোকজন তাদের জানালায় ছোট সোলার প্যানেল বসিয়েছে।
কিন্তু সরকারি প্রচারযন্ত্র উত্তর কোরিয়ায় খুবই দক্ষ। প্রতিবছর পিয়ংইয়ং-এ আড়ম্বর করে পালন করা হয় ফাউন্ডেশন ডে। এখানে এই তরুণী সেই দিনের নাচগানের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হচ্ছেন।
বাইরের দুনিয়া থেকে যে হুমকি রয়েছে, তার চিহ্ন দেখা যায় এখানে ওখানে। মার্কিনবিরোধী নানা ধরনের ব্যানার ঝুলছে এখানে ওখানে। রয়েছে নানা ধরনের দেশাত্মবোধক স্লোগান। কিন্তু উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও মানুষকে হাসতে দেখা যায়।
উত্তর কোরিয়ার সরকার বলে থাকে তারা যে কোন সময়ে যুদ্ধে জন্য প্রস্তুত। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্যাংক বিরোধী এক স্থাপনা। এই গর্তগুলোর তলায় বিস্ফোরক বসানো আছে। উত্তর কোরিয়া আক্রান্ত হলে এগুলোতে বিস্ফারণ ঘটিয়ে ট্যাংক চলাচল ঠেকানো হবে।
কিন্তু আধুনিক যুদ্ধ চলে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু বোমার হুমকি দিয়ে। সেখানে উত্তর কোরিয়ার এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বেশ সেকেলেই মনে হয়।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, ০৮ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ