মারণ কারোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব স্তব্ধ। চীনের উহান থেকে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে প্রতিনিয়তই মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। প্রায় ৯ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই মহামারীর প্রতিষেধক তৈরি করতে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক এ সময়ে চীনা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসা বা প্রতিরোধে ‘খুবই কার্যকর’ অ্যান্টিবডির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু চীনের বিজ্ঞানীরা এমন কিছু অ্যান্টিবডির খোঁজ পেয়েছে যা নতুন করে করোনা ভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়তে বাধা দেয়। অর্থাৎ শরীরে করোনা ভাইরাস বাসা বাঁধলে তার সঙ্গে লড়তে না পারলেও এই অ্যান্টিবডি শরীর কোভিড ১৯ ঢুকতে বাধা দেয়। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন থেকে এমনই জানা যাচ্ছে।
বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাং লিংকি জানিয়েছেন, তার দলের সন্ধান পাওয়া অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি ওষুধ বর্তমান পদ্ধতির চেয়ে অধিক কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটিকে তিনি ‘বর্ডারলাইন’ বা ‘সীমান্তরেখা’ বলছেন। এর আগে এ রকম প্লাজমা বা রক্তরস পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার নজির রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন এ বিজ্ঞানী।
এর আগে গত জানুয়ারির শুরুতে এই গবেষক দলটি শেনঝেনে থার্ড পিপল হাসপাতালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া রোগীদের রক্তে অ্যান্টিবডি বিশ্লেষণ শুরু করেছিলেন। এরপর তারা ২০৬টি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি আলাদা করেন। যার ভাইরাসের প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার একটি জোরালো ক্ষমতা রয়েছে।
এই অ্যান্টিবডি আলাদা করার পর দলটি আরও একটি পরীক্ষা চালায়। এতে অ্যান্টিবডিগুলো ভাইরাসকে কোষে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারে কি-না, তা পরীক্ষা করা হয়। প্রথম ২০ বা এর বেশি অ্যান্টিবডির মধ্যে পরীক্ষায় দেখা যায়, চারটি অ্যান্টিবডি ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে আবার দুটি খুব ভালোভাবে কাজ করছে।
এরপর গবেষকরা সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিবডিটি শনাক্ত করেন। একইসঙ্গে আলাদা করা অ্যান্টিবডিগুলো সংযুক্ত করে করোনা ভাইরাসের পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে চেষ্টা করছেন। ঝাং লিংকি এও বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগ্রহী ওষুধ নির্মাতারা এটি নিয়ে পরীক্ষা করতে পারবেন। প্রথমে পশু ও পরে মানুষের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে।
গবেষক দলটি ইতিমধ্যে বায়োটেক ফার্ম ব্রি বায়োসায়েন্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে।
গবেষক ঝাংয়ের দাবি, কয়েক দশক ধরে অ্যান্টিবডিগুলোর গুরুত্ব প্রমাণিত হয়েছে। ক্যানসার চিকিৎসা বা সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় এর প্রয়োগ করা হয়েছে। অ্যান্টিবডি কোনো ভ্যাকসিন নয়, তবে ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের রোগপ্রতিরোধের জন্য দেওয়া যেতে পারে।