ভ্যাকসিনের জন্য সময় মাত্র ১৮ মাস, ঝুঁকি মুক্ত কতটা?

গেল বছরের ডিসেম্বর থেকে চীনের উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এ ভাইরাস ইতোমধ্যে ২ শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়তই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮,৫৯,৮০০ জন এবং মারা গেছে ৪২,৩৪০ জন। এদিকে, এ ভাইরাসের যুক্তরাষ্ট্রে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৮৫৯২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪০৫৫ জনের। গত মঙ্গলবারই মৃত্যু হয়েছে ৮৬৫ জনের, যা যুক্তরাষ্ট্রে একদিনের রেকর্ড। কোনও প্রতিষেধক না থাকায় বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ইতালিতে এবং তারপরের স্থানেই আছে স্পেন।

এদিকে ১৮ মাস অনেক দীর্ঘ সময় মনে হতে পারে। কিন্তু ভ্যাকসিন উৎপাদনের কথা চিন্তা করলে একে খুব স্বল্প সময়ই বলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য এতটুকু সময়ের কথাই বলছে। তবে এ খাতের নেতারা বলছেন, এটা খুব তড়িঘড়ি হয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করেই তবে ভ্যাকসিন হাতে আসতে পারে।

গত সপ্তাহে ভ্যাকসিন তৈরির এ সময়সীমার কথা সংবাদের শিরোনাম হয়। ওই সময় ট্রাম্প ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভা করে ঘোষণা দেন, তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসি টিভি ক্যামেরার সামনে ট্রাম্পের ওই পূর্বাভাসে ওপর জল ঢেলে দেন। তিনি বলেন, তিন-চার মাসে ভ্যাকসিন হবে না, এটা তৈরিতে অন্তত এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে। সেই থেকে গণমাধ্যমে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই করোনাভাইরাসে ভ্যাকসিন আসছে বলে খবর প্রচার করা হচ্ছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন তৈরির প্রথম অভিজ্ঞতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।

বেইলার কলেজ অব মেডিসিনের সংক্রামক রোগ এবং ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ড. পিটার হোটেজ বলেন, ‘ফাউসি এক থেকে দেড় বছরের যে সময়সীমার কথা বলেছেন, এটি আমি আশাবাদ বলে মনে করি। তবে সম্ভবত আরও বেশি সময় লাগতে পারে।’

রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনের সহ-উদ্ভাবক ড. পল ওফিটের ভাষ্য, ‘ফাউসি যখন করোনাভাইরাস নিয়ে সময়সীমার কথা বলেছিল, তখন আমি একে হাস্যকর আশাবাদ বলে মনে করেছিলাম। আমি নিশ্চিত, তিনিও তা–ই মনে করবেন।’

ভ্যাকসিন তৈরির হিসাব সাধারণত বছরের হিসাবেই করা হয়। এখানে মাসের হিসাব আসে না। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ভ্যাকসিন খুঁজে পাওয়ার জন্য বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান মর্ডানা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য সরকারি গবেষকদের কাছে পাঠিয়েছিল। এ মাসের শুরুর দিকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ডোজ স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের জেনিফার হলারের ওপর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। সিয়াটলের কায়সার পার্মানেন্তে ওয়াশিংটন রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা নেন হলার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে বিশ্বে প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো যায়। তবে ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যর্থতার ইতিহাসও অজানা নয়। ভ্যাকসিন নিরাপদ না হলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ১৯৬০ সালে হিউম্যান রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) পরীক্ষার সময় অনেক নবজাতকের ক্ষেত্রে খারাপ উপসর্গ দেখা যায়। দুটি নবজাতক মারা যায়। ১৯৭৬ সালেও নভেল সোয়াইন ফ্লুর ভ্যাকসিন পরীক্ষা করতে গিয়ে ৩০ জন মারা যান এবং অনেকের শরীর প্যারালাইসিস হয়ে যায়। ২০১৭ সালেও ফিলিপাইনে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন পরীক্ষা নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

Scroll to Top