ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে আজ রোববার ১৪ ঘণ্টার ‘জনতা কারফিউ’র ডাকে প্রচণ্ড সাড়া মিলেছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র। সকাল সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত একটানা ডাকা ১৪ ঘণ্টার এই জনতা কারফিউ চলছে। স্তব্ধ হয়েছে কলকাতাসহ রাজ্যের সর্বত্র। রাস্তায় নামেনি অধিকাংশ যানবাহন। স্কুল–কলেজ, অফিস–আদালত, হাটবাজার সব বন্ধ। গোটা পশ্চিমবঙ্গ সুনসান। রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা। হাটবাজার ক্রেতা–বিত্রেতাশূন্য। বন্ধ কলকাতা থেকে সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেন। সামান্য দু–একটি ট্রেন চলেছে অভ্যন্তরীণ রুটে। তবে যাত্রী নেই। দু–একটি সরকারি বাস চললেও যাত্রীসংখ্যা নেই বললে চলে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আজ রোববার জানিয়ে দিয়েছে, কাল সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে ২৭ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউন হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলা সদরসহ জেলার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পৌর শহর। আজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
এর ফলে কাল বিকেল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর। বিজ্ঞপ্তিতে এ কথাও বলা হয়েছে, কাল থেকে এই রাজ্যের যানবাহন বন্ধ হয়ে যাবে। চলবে না শহরে বাস, টেক্সি, স্কুটার। বন্ধ থাকবে সব ট্রেন। তবে অত্যাবশ্যক পণ্য বহনকারী গাড়ি চলবে। এই লকডাউনের বাইরে রাখা হয়েছে শাকসবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বহনকারী যানবাহন, দুধের গাড়ি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল। বাদ রাখা হয়েছে সংবাদপত্র, সংবাদমাধ্যম, ইন্টারনেট পরিষেবা। তবে হোম ডেলিভারিকে এই লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
যেসব জেলাকে এই লকডাউনের আওতায় নেওয়া হয়েছে, তা হলো কোচবিহার জেলা শহর, আলীপুরদুয়ার জেলা শহর, জয়গাঁ টাউন, জলপাইগুড়ি জেলা সদর, কালিম্পং জেলা শহর, দার্জিলিং সদরসহ কার্শিয়াং এবং শিলিগুড়ি শহর, উত্তর দিনাজপুর জেলা, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা, মালদহ সমগ্র জেলা, মুর্শিদাবাদ সমগ্র জেলা, নদিয়া সমগ্র জেলা, বীরভূম সব পৌর শহর, পশ্চিম বর্ধমান সমগ্র জেলা, পূর্ব বর্ধমান জেলা শহর, কালনা শহর এবং কাটোয়া শহর, পুরুলিয়া সমগ্র জেলা, বাঁকুরা জেলা শহর, বারজোড়া শহর এবং বিষ্ণুপুর শহর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শহর, খড়গপুর শহর, ঘাটাল শহর, ঝাড়গ্রাম জেলা শহর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সদর, হলদিয়া টাউন, দীঘা শহর ও কোলাঘাট, কন্টাই শহর, হাওড়া সমগ্র জেলা, হুগলি জেলা শহর, চন্দননগর, কোন্নগড়, আরামবাগ, শ্রীরামপুর এবং উত্তরপাড়া শহর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং, সোনারপুর, বারুইপুর, ভাঙর, বজবজ এবং মহেশতলা, উত্তর চব্বিশ পরগনার সমগ্র পৌর শহর সেই সঙ্গে সল্টলেক এবং নিউ টাউন এবং কলকাতা পৌর করপোরেশন এলাকা।
আজ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দলমত–নির্বিশেষে জনতা কারফিউতে শামিল হয়েছে। বিকেল পাঁচটায় রাজ্যের মানুষ করতালি, ঘণ্টা, শাঁখ, থালা, কাঁসর বাজিয়ে অভিনন্দন জানায়। অভিনন্দন জানান রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। কলকাতার ধর্মতলা, শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন, কলকাতা স্টেশন, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে কলকাতার জনবহুল এলাকা শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল এভিনিউ, বাইপাস সড়ক, গলফ গ্রিন, টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, সল্টলেক, লেকটাউন, খিদিরপুর, আলীপুর, বিবাদীবাগ, নাগের বাজার, বারাসাত, উল্টোডাঙ্গা, রাসবিহারী এভিনিউ এলাকা ছিল কার্যত একেবারে শূন্য। যানবাহন ছিল না। রাস্তায় গাড়িঘোড়া চলেনি। মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই জনতার কারফিউতে শামিল হয়েছে।
এদিকে ভারতে করোনাভাইরাসে আজ আরও তিনজনের মৃত্যু হলে মৃত্যুসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়। এই তালিকায় রয়েছে কর্ণাটকে একজন, মহারাষ্ট্রে দুজন, দিল্লির একজন, পাঞ্জাবের একজন, বিহারে একজন এবং গুজরাটের একজনের নাম। আর সারা দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪১ জন।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে এই আক্রান্তের সংখ্যা এখন চার। এর মধ্যে তিনজন কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে বিশেষ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে আর একজন রয়েছে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। অন্যদিকে আইডি হাসপাতালের সাধারণ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ১৯ জন। তাদের পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে।