সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ‘রকেটম্যান’ খেতাব দিয়েছেন। এই ‘রকেটম্যান’ ও তাঁর ‘পকেটে’ থাকা সেনা আর অস্ত্র নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। তবে দেশটি নিভৃতচারী হওয়ায় সব তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয় না।
যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে গোলা-বাক্য বিনিময় চরমে। ট্রাম্প ও উনের হাবভাবে মনে হয় যুদ্ধটা এই বুঝি বেধেই গেল। এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, দেশটির লাখো মানুষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কোরিয়ান পিপলস আর্মিতে (কেপিএ) নাম লেখাতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ স্বেচ্ছায় আগ্রহ দেখিয়েছে।
চলতি গ্রীষ্মের শুরুতে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর জাতিসংঘের নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রায় একই ধরনের একটি প্রতিবেদন এসেছিল। তখন দাবি করা হয়, দেশটির ৩৫ লাখ মানুষ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য স্বাক্ষর করেছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদনের যথার্থতা যাচাই করা বাইরের বিশ্লেষকদের জন্য কঠিন। সামরিক জনশক্তির বিষয়ে পিয়ংইয়ংয়ের নতুন দাবির কথা বাদ দিলেও উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সেনাবাহিনীর অধিকারী বলে বিবেচিত।
উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। জনসংখ্যার তুলনায় দেশটির সামরিক বাহিনীর আকার অস্বাভাবিক বড় বলে অধিকাংশ হিসাবেই দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ১ দশমিক ১৮ মিলিয়নের বেশি। সে হিসেবে উত্তর কোরিয়া বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম স্থায়ী সেনাবাহিনীর অধিকারী।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ কেপিএর সক্রিয় সদস্য। জনসংখ্যার অপর ২৫-৩০ শতাংশ রিজার্ভ বা আধা সামরিক ইউনিটে নিয়োজিত।
উত্তর কোরিয়ার স্থায়ী সামরিক বাহিনীর আকার সুবিশাল হওয়ার রহস্য দেশটিতে বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার মধ্যে নিহিত। আইন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে হয়। দেশটির সংবিধানে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, জাতীয় প্রতিরক্ষা নাগরিকদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব ও সম্মানের বিষয়।
উত্তর কোরিয়ার বিদ্যমান সামরিক বাহিনীর কার্যকারিতা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। প্রায় সাত দশক আগে কোরীয় যুদ্ধে অংশ নেওয়া মার্কিন সেনাদের ভাষ্য, উত্তর কোরিয়ার সেনারা এড়িয়ে চলার কৌশলে অসম্ভব রকমের দক্ষ। আর জয়ের ব্যাপারে তারা থাকে দৃঢ়সংকল্প।
তবে পেন্টাগনের সমসাময়িক প্রতিবেদন বলছে, কেপিএ গত শতকের মাঝামাঝি সময়ের প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত। তাদের ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জামগুলো বহুলাংশে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চীনে তৈরি, অথবা সেখানকার নকশানির্ভর।
উত্তর কোরিয়ায় নাগরিক সাংবাদিকতার একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা জিরো ইশিমারু। গত আগস্টে গার্ডিয়ান পত্রিকার কাছে তিনি দাবি করেন, চরম খাদ্যসংকটের কারণে উত্তর কোরিয়ার স্থায়ী সেনাদের অধিকাংশের যুদ্ধ করার মতো শক্তি নেই। তাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ।
যে যা-ই বলুক না কেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার অগ্রবর্তী সেনারা এখনো দক্ষিণ কোরিয়া ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে সক্ষম।
উত্তর কোরিয়ার বিশেষ অভিযান পরিচালনাকারী বাহিনীর কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার সদস্য রয়েছে বলে জানা যায়। যুদ্ধ বাধলে সুপ্রশিক্ষিত এই বাহিনীকে দক্ষিণ কোরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে ধারণা করা হয়।
সময়-সময় বিপুল সেনার সমারোহে কুচকাওয়াজের মাধ্যমে পিয়ংইয়ং তার সামরিক শক্তির জানান দিচ্ছে। তারা জীবাণু, পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পেও দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করছে। পিয়ংইয়ংয়ের অসংখ্য কামানের মুখ সিউলের দিকে তাক করা আছে। এসব কারণেই হয়তো উত্তর কোরিয়ার বারবার হম্বিতম্বি সত্ত্বেও কিছু করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিধায় রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, ০৫ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/সাদ