ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাশ হওয়ার পর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটির উত্তর-পূর্ব ভারতের একাংশ। বুধবার সকাল থেকেই নিম্ন আসমের ধুবড়ি, বঙ্গাইগাঁও, নওগাঁ, গুয়াহাটিসহ একাধিক জায়গায় শুরু সড়ক অবরোধ। বঙ্গাইগাঁও-এর ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে ছাত্র সংগঠনগুলো। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বাতিল না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এই বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বে বাতিল করা হয়েছে তিনটি দূরপাল্লার ট্রেন। কলকাতা-ডিব্রুগড় সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট, আপ কামরূপ ও কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস। হামসফর এক্সপ্রেস চলবে ত্রিপুরার ধর্মনগর পর্যন্ত। অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা হয়েছে গুয়াহাটি ও কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা।
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের প্রতিবাদে ত্রিপুরা রাজ্যেও। আগরতলায় সড়ক আটকে বিক্ষোভ উত্তর-পূর্ব শিক্ষার্থী সংগঠনের যৌথ মোর্চার। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব সরকারের। কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলাতেও এই বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস ও কিছু সংগঠন। মোদি-অমিত শাহের কুশপুত্তলিকাও পোড়ানো হয়।
এদিকে, বুধবার দুপুর ২টার দিকে রাজ্যসভায় এই বিল পেশ করার কথা। রাজ্যসভায় বিল পেশ করবেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ইতিমধ্যেই তিনি এই বিলটি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। আলোচনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ছয় ঘণ্টা।
এর আগে, গত সোমবার বিনা বাধায় লোকসভায় এই বিল পাশ হয়ে গেলেও রাজ্যসভায় এই বিল আটকাতে মরিয়া বিরোধীরা। শিবসেনা, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস), সংযুক্ত জনতা দল-এর মতো দলগুলো এই বিলের বিরোধিতা করতে পারে খবর।
রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপনের আগে বুধবার সকালে দিল্লিতে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এই বিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে সূত্রে খবর। মোদি বলেন, ‘সিএবি নিয়ে পাকিস্তানের ভাষাতে কথা বলছে কিছু রাজনৈতিক দল। দীর্ঘদিন ধরে যে বিলটি নিয়ে কাজ হয়নি সেটা এখন হয়েছে। তার অভিমত, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের সুফল বুঝেই উঠতে পারছে না বিরোধীরা। এই বিল নিয়ে সাধারণ মানুষের দরবারে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মোদি।
বৈঠক শেষে মোদির বক্তব্য উদ্ধৃত করে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বলেন, ‘ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যে সমস্ত সংখ্যালঘুরা এদেশে চলে আসছেন তাদের ক্ষেত্রে এই বিলটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এদিকে, সিএবি ইস্যুতে কেন্দ্রকে নিশানা করার পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষদের সমর্থনে পাশে দাঁড়ালেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ট্যুইট করে তিনি লেখেন, ‘উত্তর-পূর্বকে নৈতিকভাবে সাফ করে দিতেই মোদি-অমিত শাহ সরকারের পদক্ষেপ। এটা উত্তর-পূর্ব, সেখানকার মানুষের জনজীবন এবং ভারতের ধারণার ওপর ফৌজদারি হামলা। আমি উত্তর-পূর্বের মানুষের পাশে রয়েছি।’
কংগ্রেস নেতা তথা আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী একধাপ এগিয়ে আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা অ-মুসলিম নাগরিকদের (হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি) ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু ধর্মীয় ভিত্তিতে হওয়া এই বিলের বিরোধীতা করছে কংগ্রেস, এনসিপি, ডিএমকে ও তৃণমূল কংগ্রেস।