যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবার রেকর্ড সংখ্যক নারী প্রার্থী

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবার রেকর্ড সংখ্যক নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের (পিএ) প্রাথমিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হাউস অব কমন্সের মোট ৬৫০টি আসনের বিপরীতে এবার বিভিন্ন দল থেকে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৩ হাজার ৩২২ জন। এঁদের মধ্যে ১ হাজার ১২০ জন নারী। যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। অতীতে এমনটি আর ঘটেনি।

আগামী ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন। গত বৃহস্পতিবার ছিল প্রার্থী মনোনয়নের শেষ দিন। এবার ৮টি দল এবং ২০৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

পিএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে বাম ধারার লেবার পার্টি। দলটি মোট ৬৩২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৩ জনই নারী, যা দলটির মোট প্রার্থীর ৫২ শতাংশ। রক্ষণশীল-নীতির ধারক কনজারভেটিভ দলে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ১৯০, যা দলটির মোট ৬৩৫ প্রার্থীর ৩০ শতাংশ।

এ ছাড়া, উদারপন্থী লিবারেল ডেমোক্র্যাট মোট ৬১১ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ১৮৮ জন। গ্রিন পার্টির ৪৯৮ প্রার্থীর ২০৪ জন নারী। আর ওলেসভিত্তিক প্রাদেশিক দল প্লাইড কামরির মোট ৩৬ প্রার্থীর মধ্যে নারী আছেন ৯ জন। এই তিনটি দল মোট ৬০টি আসনে ব্রেক্সিট বিরোধী একক প্রার্থী দিতে সমঝোতা করেছে। যে কারণে দলগুলোর প্রার্থী সংখ্যা অতীতের তুলনায় কমেছে।

তবে প্রার্থী সংখ্যায় তুমুল পতন ঘটেছে কট্টর ডানপন্থী দল ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টির (ইউকিপ)। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) বিরোধী ইউকিপ ২০১৭ সালে মোট ৪৬৭ আসনে নির্বাচন করে। দলটি এবার মাত্র ৪৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। যার মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ১০ জন।

অন্যদিকে নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বে নবগঠিত ব্রেক্সিট পার্টি ৬ শতাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত ২৭৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে নারী প্রতিদ্বন্দ্বী ৫৪ জন। চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্রেক্সিট পার্টি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।

তবে নাইজেল ফারাজ প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছেন, তাঁর দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বসিয়ে দিয়েছে কনজারভেটিভরা। আজ শনিবার লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে নির্বাচন সংক্রান্ত অনিয়মের দুটি অভিযোগ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে নানা প্রতিশ্রুতির লড়াই। লেবার দলের বামপন্থী নেতা জেরেমি করবিন গ্যাস, বিদ্যুৎ রেলওয়েকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই ২০১৭ সালের নির্বাচনে। এবার তিনি ব্রিটিশ টেলিকম (বিটি) কোম্পানিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ে ঘরে ঘরে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট এবং টেলিফোন সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এবং রাষ্ট্রীয় কল্যাণ সেবা আরও উদার করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা তুলে ধরছেন তিনি। করবিনের এমন প্রতিশ্রুতির চাপে ব্রেক্সিটময় এই নির্বাচনের বিতর্ক ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে করবিনের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘সবি খেপাটে কমিউনিস্ট বুলি’। কিন্তু লেবারের প্রতিশ্রুতির ধাক্কা সামাল দিতে তিনি ঠিকই দলীয় অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে ইতিমধ্যে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতি নির্বাচনে ধনিদের জন্য কর কর্তনের প্রতিশ্রুতি থাকলেও কনজারভেটিভরা এবার সেটি এখন পর্যন্ত উচ্চারণও করেনি।

Scroll to Top