বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস গতকাল রোববার পদত্যাগ করেছেন। তাঁর পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি বিতর্কিত বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। মোরালেসের বিরুদ্ধে বলিভিয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছিল।
টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোরালেস বলেন, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। লাতিন আমেরিকায় দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনরত মোরালেসের পদত্যাগের সমর্থনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এতে দেশটির নেতৃত্বে একধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
পদত্যাগের ঘোষণা দিতে মোরালেস উড়োজাহাজে বলিভিয়ার কোকো উৎপাদনকারী চিমোর এলাকায় যান। সেখান থেকেই তিনি রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন।
মোরালেস বলেন, ‘আমি দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাচ্ছি না। আমি কোনো অন্যায়ও করিনি। জীবনের শেষ এখানে নয়। এখান থেকে লড়াই শুরু। আমি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোক, এটাই আমার পাপ। আমি পদত্যাগ করছি, যাতে বিরোধীরা আমার ভাইদের লাথি মারতে না পারে।’
এএফপির খবরে জানানো হয়, বলিভিয়ার লা পাজ এলাকার রাস্তাগুলো উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। মোরালেসের বিরোধীরা আতশবাজি পুড়িয়েছে। দেশটির লাল, হলুদ ও সবুজ পতাকা উড়িয়েছে।
বলিভিয়ার নির্বাচনে সরকারবিরোধী প্রধান প্রার্থী সে দেশের জনগণকে বলেন, বলিভিয়া বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে। কাল বলিভিয়া নতুন এক দেশ হবে।
২০ জন আইনপ্রণেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দল মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে আশ্রয় নিয়েছে। মেক্সিকো মোরালেসকে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মোরালেস টুইট করেন, তাঁকে আটক করার জন্য পরোয়ানা রয়েছে। তবে পুলিশের কমান্ডার ভ্লাদিমির ইউরি ক্যালডেরন স্থানীয় ইউনাইটেড টেলিভিশনকে বলেন, ঘটনা এমন নয়। মোরালেস টুইট করেন, সহিংস দল তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল।
পুলিশ গতকাল রোববার রাতে ঘোষণা দিয়েছিল, তাঁরা বলিভিয়ার নির্বাচনী আদালতের প্রধান মারিয়া ইউগেনিয়া চোখেকে আটক করেছে। বিরোধীরা নির্বাচনী আদালতকে পক্ষপাতমূলক বলে অভিযোগ তুলেছিল।
মোরালেস আয়মারা ২০০৬ সালে বলিভিয়ার প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি আগে কোকোচাষি ছিলেন।
রোববার পদত্যাগের সময় নিজের শাসনকালের সমর্থনে কথা বলেন মোরালেস। ১৪ বছরের শাসনকালে ক্ষুধা, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অর্জন রয়েছে বলে জানান মোরালেস। তিনি বলেন, তাঁর সময়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার তিন গুণ উন্নতি হয়েছে।
২০ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে জয়ী হন মোরালেস। তিনি চতুর্থ মেয়াদে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বিরোধীরা বলছেন, ভোট গণনায় জালিয়াতি হয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে বলিভিয়ার রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ চলে। এ সময় তিনজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন।
দ্য অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস নির্বাচন নিয়ে নিরীক্ষা চলায়। গতকাল তারা জানিয়েছে, নির্বাচনে প্রযুক্তি, ব্যালট, পরিসংখ্যানবিষয়ক প্রকল্পসহ সব ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে।
বিক্ষোভের কারণে ৬০ বছর বয়সী মোরালেস নতুন নির্বাচন আহ্বান করেন। এতেও বিক্ষোভকারীরা শান্ত হননি। সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ও পুলিশ বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ আহ্বান করে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান উইলিয়ামস কালিম্যান সাংবাদিকদের বলেন, বলিভিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য তিনি মোরালেসকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।