মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক চলমান অভিযানের বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকারের পক্ষে কথা বলায় একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছেন ‘মিস মিয়ানমার’। আর জের ধরেই মিস ইউনিভার্স মিয়ানমার কর্তৃপক্ষে তাকে দেওয়া মুকুট ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়।
শোয়ে ইয়ান শি নামের ১৯ বছর বয়সী ওই সুন্দরী গত ২৪ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুকে রাখাইনে অভিযান ও তার মতামত সংক্রান্ত একটি ভিডিও পোস্ট করলে এ সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংককভিত্তিক মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ। ওই ভিডিওতে মিস মিয়ানমার শোয়ে ইয়ান শি রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসাকে) দায়ী করে বলেন, সুন্দরী প্রতিযোগিতার একজন প্রতিযোগী হিসেবে তার দায়িত্ব আরসার শাস্তির পক্ষে কথা বলা।
ভিডিওতে শি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে ঘটে যাওয়া সহিংসতা সম্পর্ক সাধারণ মানুষ আমার মতামত জানতে চায় বলেই আমি নিজ দায়িত্বে এই ভিডিও পোস্ট করেছি। আরসা গত মাসে সেনাদের ওপর হামলা চালায়। অথচ তারা এবং তাদের মিত্ররা বিষয়টি এমনভাবে প্রচার করছে যেন মনে হচ্ছে উল্টো তারাই নির্যাতিত হয়েছে। তবে বিষয়টি বোঝার একমাত্র উপায় হলো মিয়ানমারে এসে নিজ চোখে পরিস্থিতি দেখে যাওয়া। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে এসে প্রকৃত পরিস্থিতি দেখে যাবার আহবান জানাচ্ছি।’
ভিডিওতে তিনি আরসাকে ইসলামী সম্প্রসারণবাদী আন্দোলন হিসেবে আখ্যা দিয়ে আরও বলেন, সংগঠনটি প্রতারণা করে আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি রাখাইনে চালানো সেনা অভিযানতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন। ৩ মিনিট ৪১ সেকেণ্ডের ওই ভিডিও পোস্ট করার কিছু সময়ের মধ্যেই দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে রাখাইনে সহিংসতার বিভিন্ন স্থির চিত্র দেখানোর পাশাপাশি শোয়ে ইয়ান তার কণ্ঠে বর্ণনা দিয়েছেন। তবে ওই ভিডিওতে জাতিসংঘের তদন্ত দল মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না দেওয়া অথবা পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
ভিডিওটি ভাইরাল হলে তা সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজক ব্যাংককভিত্তিক মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, শোয়ে’র ভিডিওটির মাধ্যমে সুন্দরী প্রতিযোগিতার নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাই আগামী ৫ থেকে ২৬ অক্টোবর ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭ প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নিতে পারবেন না। কারণ তাদের এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
এদিকে মিস ইউনিভার্স মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শোয়ে’কে দেওয়া মুকুট, উত্তরীয়, পুরস্কারের অর্থ এবং ট্রফি ফেরত দিতে বলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত শোয়ে তা মুকুট, উত্তরীয়, পুরস্কারের অর্থ এবং ট্রফি ফেরত দিতে রাজি হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, ০৩ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/নীল