\’আইএনএক্স মিডিয়া\’ দুর্নীতি মামলায় সদ্য গ্রেফতারকৃত ভারতীয় ইউপিএ সরকারের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা পি চিদম্বরমকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) স্থানীয় সময় দুপুরে সিবিআই কর্মকর্তারা তাকে আদালতে হাজির করলে বিচারক তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সূত্রের বরাতে গণমাধ্যম \’এনডিটিভি\’ জানায়, বর্তমানে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য চিদম্বরমকে একই দিন আদালতে হাজিরের পূর্বে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে গত বুধবার (২১ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ১০টা নাগাদ পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতাকে দিল্লির নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।
পরবর্তীতে তাকে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর সাবেক এই অর্থমন্ত্রীকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। মূলত এসবের প্রেক্ষিতেই বিচারক আগামী ২৬ আগস্ট পর্যন্ত পি চিদম্বরমকে সিবিআইয়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। শুনানি চলাকালে আদালতে চিদম্বরমের স্ত্রী নলিনী ও জ্যেষ্ঠ পুত্র কার্তি উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চিদম্বরমকে গ্রেফতারের পর গত বুধবারই সিবিআই ভবনের লক-আপ স্যুট-৩এ রাখা হয়। ২০১০ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ভবনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিংকে সঙ্গে নিয়ে ভবনের লক-আপের সকল সুবিধাগুলো পরিদর্শন করেছিলেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সিবিআই কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তিনি সরকারের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৭ সালে বিদেশ থেকে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকার তহবিল পাওয়ার জন্য \’আইএনএক্স মিডিয়া\’কে ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে ছেলে কার্তি চিদম্বরমের সংস্থাকেও এক বিরাট অঙ্কের ঘুষ দিয়েছিল \’আইএনএক্স মিডিয়া\’ কর্তৃপক্ষ।
নিজের রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিভিন্ন সময় সরকারের অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পেনশন বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বারংবার নির্বাচিত হয়েছিলেন নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য হিসেবেও।
যদিও বিশ্লেষকদের মতে, ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সাল থেকে। সে সময় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এই পি চিদম্বরম। অনেকের দাবি, তখন গুজরাট রাজ্যের একটি ভুয়ো এনকাউন্টার সংক্রান্ত মামলায় পি চিদম্বরমের সরাসরি নির্দেশেই গ্রেফতার করা হয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০০৫ সালে অমিত শাহ গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সোহরাবুদ্দিন শেখ নামে এক দুষ্কৃতিকারী, তার স্ত্রী এবং সাক্ষী থাকা এক বন্ধুকে বিচার ব্যবস্থার আওতার বাইরে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও এতে তার জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় পরবর্তীতে অমিত শাহকে মুক্তি দিয়ে দেন আদালত।
অপর দিকে পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গোটা বিষয়টিকে একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে এরই মধ্যে মন্তব্য করা হয়েছে।
দলটির সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নিজের এক টুইট বার্তায় বলেন, \’রাজ্যসভার একজন অত্যন্ত যোগ্য ও সম্মানিত সদস্য পি চিদম্বরম; তিনি সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন গত কয়েক দশক যাবত অতি বিশ্বস্ততার সঙ্গে দেশের সেবা করে গেছেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আরও বলেন, \’তিনি (চিদম্বরম) নির্দ্বিধায় ক্ষমতাসীন সরকার প্রসঙ্গে সত্যি কথা বলেছেন এবং যার ব্যর্থতাও প্রকাশ করেছেন। তবে সত্যি সব সময়েই কাপুরুষদের পক্ষে অসুবিধাজনক হয়; তাই তাকে লজ্জাজনকভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করা হচ্ছে। আমরা অতীতের মতো এবারও তার পাশে দাঁড়িয়েছি এবং পরিণতি যা-ই হোক না কেন সত্যের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব।\’