ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের ১৩২ টি গ্রামে গত তিন বছরে কোন কন্যা শিশু জন্মায়নি – চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে এ রকম একটি খবর প্রকাশিত হবার পর বিষয়টি বেশ আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে এবং সরকার বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে।
\’মেয়ে বিহীন গ্রামগুলো\’ উত্তরাকশি এলাকায় অবস্থিত, যেখানে ৫৫০টি গ্রাম এবং পাঁচটি গ্রামে প্রায় চার লক্ষ মানুষ বসবাস করে। বেশিরভাগ স্থান পাহাড়ি এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল।
ভারত এমন একটি দেশ যেখানে নারী ও পুরুষের অনুপাতে অসামঞ্জস্য বেশ প্রকট। অবৈধভাবে কন্যা শিশু ভ্রূণ গর্ভপাতের কারণে এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
কিন্তু উত্তরাকশি এলাকায় কোন কন্যা শিশু না জন্মানোর বিষয়টি কিছুটা ক্ষোভ তৈরি করেছে।
খবরে বলা হচ্ছে , এপ্রিল এবং জুনের মধ্যে ১৩২ টা গ্রামে ২১৬টা ছেলে শিশু জন্ম নিয়েছে যেখানে কোন মেয়ে শিশু জন্ম নেয় নি।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ দেখেছে যে এই একই সময়ের মধ্যে অন্য জায়গায় অবস্থিত ১২৯টি গ্রামে ১৮০টা মেয়ে শিশু জন্মালেও কোন ছেলে শিশু জন্ম নেয়নি।
পুরো চিত্র প্রকাশ করলে দেখা এছাড়া আরো ১৬৬ গ্রামে এই একই সময়ের মধ্যে ৮৮টি কন্যা শিশু এবং ৭৮ ছেলে শিশু জন্ম নিয়েছে।
সার্বিকভাবে উত্তরাকশিতে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ৯৬১ শিশু জন্ম নিয়েছে, যার মধ্যে মধ্যে ৪৭৯টি মেয়ে শিশু এবং ৪৬৮টি ছেলে শিশু।
কর্মকর্তারা বলছেন, এই জেলায় ১০০০ ছেলে শিশুর বিপরীতে ১০২৪টি মেয়ে শিশু জন্ম নিয়েছে, যেটি ভারতের জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি।
ভারতের জাতীয় হিসেবে দেখা যায়, ১০০০টি ছেলে শিশুর বিপরীতে ৯৩৩টি মেয়ে শিশু জন্ম নিচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, জন্ম সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের যেসব স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন, গণমাধ্যম সম্ভবত শুধু তাদের কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছে।
টিকাদান কর্মসূচি এবং পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রমের জন্য ৬০০ স্বেচ্ছাসেবীকে কাজ দেয়া হয়েছে যাতে তারা গর্ভবতী নারী এবং জন্ম সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে।
জেলার সিনিয়র অফিসার আসিস চৌহান বলেছেন, \”আমি মনে করি মিডিয়ার করা \’নো গার্ল ভিলেজ\’ রিপোর্টে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। একই সাথে প্রেক্ষাপটের সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। যাই হোক, আমরা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি।\”
সেজন্য ২৬ জন কর্মকর্তা ৮২টি গ্রামে ঘুরে এই তথ্যের সত্যতা যেমন যাচাই করছে এবং একই সাথে কোথায় ভুল হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখছে।
এখানে কী ধরণের ভুল হতে পারে?
একটি সম্ভাবনা হচ্ছে, তথ্যগুলো ভুল কিংবা অসম্পূর্ণ হতে পারে। সেখানে স্বাস্থ্য কর্মীদের ভুল থাকতে পারে।
তারা কি এটা করেছে যে ছেলে শিশুদের সংখ্যাকে কিছু গ্রামে এবং মেয়ে শিশুদের সংখ্যাকে অন্য গ্রামে অন্তর্ভুক্ত করেছে?
দ্বিতীয়ত, উত্তরাকশি এলাকায় জনসংখ্যা কম। এখানে একটি গ্রামে গড় জনসংখ্যা ৫০০ এবং প্রত্যন্ত গ্রামের গড় লোকসংখ্যা প্রায় ১০০\’র মতো।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সবচেয়ে ছোট গ্রামগুলোতে সাধারণত ১০ থেকে ১৫টি পরিবার আছে।
\”যদি অনেক গ্রামে কন্যা শিশু জন্ম না নেয়, তাহলে সেটা পুরো জেলার নারী-পুরুষের অনুপাতের উপর প্রভাব ফেলতো,\” বলছেন মি. চৌহান।
স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, এই জেলায় ছেলে এবং কন্যা শিশুর মধ্যে কোন বৈষম্য করা হয় না এবং এখানে উভয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অনুপাত বজায় রয়েছে।
\”ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক, আমরা শুধু প্রার্থনা করি, সে যেন সুস্থ এবং সুখী হয়,\” হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলেন স্থানীয় বাসিন্দা রোশনি রাওয়াত।
এছাড়া পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি পরিশ্রমী। তারা কৃষিকাজ করে, ঘাস কাটে, গরুর দুধ আহরণ করে, রান্নাবান্না এবং সংসারের নানা কাজ করে।
এছাড়া পুরুষদের মধ্যে অ্যালকোহল পানের প্রবণতা অনেক বেশি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কয়েক বছর যাবত এ অঞ্চল থেকে তারা কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যার কোন খবর পাননি।
এখানে রেজিস্ট্রিকৃত তিনটি আলট্রাসাউন্ড মেশিন রয়েছে এবং এই তিনটি মেশিনই সরকারি হাসপাতালে।
মি: চৌহান বলেন, \”অবৈধ গর্ভপাত করা কিংবা কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা করার মতো কোন অর্থনৈতিক কারণ এখানে নেই।\”
তবে এখানে আরেকটি মজার বিষয় আছে।
এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত জন্ম নেয়া ৯৬১টি শিশুর মধ্যে ২০৭টি জন্ম নিয়েছে বাড়িতে এবং বাকিগুলো হাসপাতালে।
এর মধ্যে ১০৯টি ছেলে শিশু এবং ৯৩টি কন্যা শিশু। পুরো জেলায় নারী এবং পুরুষের যে অনুপাত রয়েছে, এই হিসেব সেটির পুরোপুরি বিপরীত।
\”এ বিষয়টা কিছুটা অস্পষ্ট। এটা আমাদের আরো তদন্ত করে দেখতে হবে। সাধারণত প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে শিশুরা বাড়িতে জন্ম নেয়। কারণ সেখান থেকে হাসপাতালে যাওয়া কষ্টকর,\” বলছিলেন জেলার সিনিয়র মেডিকেল অফিসার চন্দন সিং রাওয়াত।
\’হারিয়ে যাওয়া কন্যা শিশুদের\’ বিষয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।