ভারতকে সশস্ত্র ড্রোন বিক্রির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ভারতের বহুদিনের প্রচেষ্টার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র নয়াদিল্লিকে \’সংহত বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা\’ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই ব্যবস্থা হাতে পেলে ভারতের সামরিক ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সামরিক কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উভয় দেশের বিভিন্ন ঘাঁটির নিরাপত্তা আরও দৃঢ় হবে। এর পেছনে চীনকে শায়েস্তা করারও উদ্দেশ্যও রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
১৪ ফেব্রুয়ারি কাস্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর থেকে জোর তৎপরতা চালাচ্ছিল নয়াদিল্লি। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওই অনুমোদন প্রস্তাব এসেছে। এ ছাড়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমাগত সামরিক শক্তিবৃদ্ধি হোয়াইট হাউসের উদ্বেগের কারণ। তাই, কৌশলগত কারণেই দিল্লির হাতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র তুলে দিতে তারা দ্বিধা করছে না।
সূত্র বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের সেরা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিই বিক্রি করবে। তবে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র কবে সশন্ত্র ড্রোন হাতে পাবে ভারত সে বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন।
২০১৭ সালের জুনে ট্রাম্প-মোদি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র নীতিগতভাবে ভারতকে \’গার্ডিয়ান ড্রোন\’-এর নজরদারি সংস্করণ দিতে রাজি হয়েছিল। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সই না করা দেশগুলোর মধ্যে ভারতই প্রথম এই এমটিসিআর-ওয়ান ক্যাটাগরির মানবহীন নজরদারির ব্যবস্থা পেতে চলেছিল। কিন্তু ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়। সশস্ত্র ড্রোন কিনতে ভারতের প্রায় ২৫০ কোটি ডলার খরচ হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিকতম দুটি প্রযুক্তি টার্মিনাল হাই অলটিচুড এরিয়া ডিফেন্স সিস্টেম (থাড) এবং প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ভারতকে দেওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রোধে সেগুলো অত্যন্ত কার্যকর। তবে এই প্রস্তাবে ভারত এখনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কারণ, রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিনতে ইতিমধ্যেই চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি। যা নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের রোষের মুখেও পড়েছে। এদিকে কারো-কারো ধারণা, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সখ্য যাতে না বাড়ে, সে জন্যই এই প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেছেন, আমরা চাই ভারত আমাদের সেরা প্রযুক্তি পাক। এতে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত হবে। একইসাথে ভারত—প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় আরও বেশি অঞ্চল জুড়ে নিরাপত্তা দিতে পারবে।
চলতি সপ্তাহেই ভারত-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে একটি নথি ওয়াশিংটন প্রকাশ করেছে। মূলত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবাধ ও মুক্ত বাণিজ্য বজায় রাখাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সে বিষয়ে তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী নয়াদিল্লি। সে কারণেই ২০১৬ থেকে নানা সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি পাওয়ার লাইসেন্স পেয়েছে ভারত। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একের পর এক এমএইচ সিক্সটিআর সি-হক হেলিকপ্টার, অ্যাপাচি হেলিকপ্টার, পি-এইট্টিওয়ান মেরিটাইম পেট্রোলিং এয়ারক্র্যাফট, এম-৭৭৭ হাউইৎজার পেয়েছে। একইসাথে নয়াদিল্লির চাহিদামতো লকহিড মার্টিন এফ-২১ এবং এফ ১৮/এ দুই আসনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব ভেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
লেটেস্টবিডিনিউজ/এনপিবি