লোকসভা নির্বাচনে মোদির ‘ক্যারিশমার’ কাছে শুধু দল নয় তিনি নিজেও হেরে গেছেন। তাই ফলাফলের দুদিন পর হারের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে কংগ্রেস সভাপতির পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। কিন্তু মা সোনিয়াসহ দলের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা তার এই সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানালেও রাহুল গান্ধী এখনো পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড়।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কংগ্রেসের দুই বর্ষীয়ান নেতা আহমেদ প্যাটেল এবং কে সি বেণুগোপালের সঙ্গে বৈঠক করে রাহুল পুনরায় তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। শুধু পদত্যাগের কথা নয় কংগ্রেসের নতুন সভাপতি করার জন্য তাদেরকে নেতা খুঁজতে বলেছেন রাহুল।
ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ফের ভরাডুবির পর গত শনিবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটি বৈঠক করে। সেখানে পদত্যাগ করার কথা জানান রাহুল। কিন্তু কমিটি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। দলের নেতারা এই দুঃসময়ে রাহুলকেই হাল ধরে রাখার অনুরোধ করেন। রাহুলের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে মা সোনিয়া গান্ধীর দ্বিমত থাকলেও বোন প্রিয়াঙ্কা রাহুলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান।
বৈঠকে সেদিনের মতো বিষয়টি নিয়ে আর কোনো আলোচনা না হলেও রাহুল পুনরায় তার পদত্যাগের বিষয়ে অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন। মা সোনিয়া গান্ধী ও বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ফের বোঝালেও তাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারেননি। তারাও শেষ পর্যন্ত রাহুলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।
শুধু পরিবারের সদস্যরা নয় দলের আরও অনেক নেতা-নেত্রীরাও রাহুলের সঙ্গে দেখা করে কিংবা ফোনের মাধ্যমে পদত্যাগ যেন না করে সে বিষয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। তবে তাদের সে চেষ্টাতেও কোনো লাভ হয়নি। কোনোভাবেই আর কংগ্রেস সভাপতির পদে থাকতে রাজি হননি রাহুল।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সাংসদরা রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ফোন করেন। কিন্তু রাহুল কারো সঙ্গেই দেখা করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তাছাড়া রাহুলের নির্দেশেই তার সমস্ত সাক্ষাতকার, বৈঠক এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি বাতিল করেছে কংগেস।
দেশটির গণমাধ্যমগুলো বলছে, রাহুল গান্ধী এখন পদত্যাগ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ নিয়ে আর কোনো দ্বিমতও নেই। কেবল নতুন কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন করা পর্যন্ত দায়িত্বভার সামলাবেন তিনি। তবে এ সময়ের মধ্যেও দলের সাংগঠনিক বা অন্য কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন না।
পদত্যাগ নিয়ে সভাপতির এমন অনড় অবস্থানে দলও নিজেদের পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে। কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি রাহুলের বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে। কে হচ্ছেন পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতি তা নিয়েও জল্পনা চলছে। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, কার্যনির্বাহী কমিটির পরবর্তী বৈঠকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে রাহুলের পদত্যাগ ঘোষণা করা হতে পারে।
মোদির বিজেপির কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরেছে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দল কংগ্রেস। তবে শুধু কংগ্রেস নয় গত অর্ধ শতাব্দী ধরে যে আসনটি গান্ধী পরিবারের দখলে এবার সেই আসনে পরাজিত হয়েছেন দলটির সভাপতি রাহুল গান্ধী।
নেহেরু-গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের আমেথি আসনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে হারিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তবে রাহুল কেরালার ওয়েনাড থেকে দ্বিতীয় আরেকটি আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।