ভারতের লোকসভা নির্বাচনের নিজেদের ভরাডুবির শতভাগ দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। নিজের পুরোনো আমেথি আসনটিও হারিয়ে ফেলেন বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে। এর পরই গুঞ্জন উঠেছে, পরাজয় মেনে নিতে না পেরে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন রাহুল। এদিকে সভাপতির পদত্যাগ ঠেকাতে সরব হয়ে উঠেছে দলের নেতাকর্মীরা।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, আজ শনিবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কী করবেন কংগ্রেস সভাপতি তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। রাহুলের পদত্যাগের কথা শুনেই দলের নবীন নেতারা দিল্লি আসতে শুরু করেছেন। তারা চান, রাহুল যাতে কোনোভাবেই পদত্যাগপত্র না দেন। কারণ, তারা মনে করছেন, রাহুল জেদ ধরে থাকলে ইস্তফা দিয়েই দেবেন।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আজ রাহুল ইস্তফা দিতে চাইলে আদৌ কি তা গ্রহণ করা হবে? এই প্রশ্নে মতিলাল ভোরার মতো প্রবীণ নেতারা রাহুলের ওপরই আস্থা রাখছেন। ভোরার পাল্টা প্রশ্ন, ‘রাহুল গান্ধীর বদলে দায়িত্ব নিতে পারেন, দলে এমন ব্যক্তি কে আছে?’
দলে শীর্ষ পদের প্রত্যাশী যে নেই, তা নয়। রাহুল জমানায় ‘উপেক্ষিত’ নেতারা এখন সুযোগ বুঝে খড়গহস্ত তার উপরে। কংগ্রেসের এক নেতা টুইটারে লিখেছেন, ‘সভাপতির ইস্তফার প্রসঙ্গ ভিত্তিহীন ও অপ্রাসঙ্গিক। এটা আমরা কখনওই ভুলব না, রাহুল গান্ধীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও লড়াকু মেজাজের কারণেই এনডিএ-কে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল কংগ্রেস।’
এর পরে দ্বিতীয় একটি টুইটে রাহুলের নেতৃত্বকে ‘দৃষ্টান্তমূলক’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
দলের প্রবীণ নেতা অনিল শাস্ত্রীর মন্তব্য, ‘ভোট প্রচারে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’-এর মতো স্লোগান আসলে বুমেরাং হয়েছে। রাফাল মানুষের মনে দাগ কাটেনি। ন্যায় প্রকল্পও নিচু স্তর পর্যন্ত পৌঁছয়নি।’ তবে শাস্ত্রীর মতে, ‘রাহুল গান্ধীর ইস্তফা দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। ইস্তফা দেওয়া মানে দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া। বরং এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাড়িয়ে লড়াই করে যেতে হবে।’
প্রবীণ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, নিজের আশপাশে রাহুল যাদের রেখেছেন, তারাই ভুল পরামর্শ দিয়েছেন। এই সব ফাঁক ভরাট করে নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুতে হবে।
যদিও রাহুলের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই আজ উত্তরপ্রদেশে দলের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন রাজ বব্বর। আমেথিতে দলের হারের দায় নিয়ে সেই জেলা কমিটির সভাপতিও ইস্তফা দিয়েছেন। কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা বলছেন, এ তো রাহুলকে আড়াল করার ছল।
আর রাহুল-পন্থীরা বলছেন, ‘আজকের বৈঠকে ইস্তফার ঢল নামবে। কিন্তু রাহুল ইস্তফা দিলেও তা গ্রহণ করার সাহস কে দেখাবে?’