২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিষ্ঠার সঙ্গে ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত ও ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত করে আসছেন। তার সমালোচকরা মোদির ক্ষমতাকালকে ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ বলে অভিহিত করতেই বেশি পছন্দ করেন।
‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ কথাটি স্মৃতিতে জাগিয়ে তোলে ১৯৭৫ সালের জুন থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়কালকে, যখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সাংবিধানিক অধিকার স্থগিত করেছিলেন এবং রাজনীতিতে নিজের কর্তৃত্ববাদী ইচ্ছা আরোপ করেছিলেন। নিজের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ভারতের ‘শক ট্রিটমেন্ট’ প্রয়োজন দাবি করে তেমনটি করেছিলেন ইন্দিরা। মিসেস গান্ধীর মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের ওই অন্ধকার সময়টিতে বিরোধী নেতাদের জেল দেয়া হয়েছিল এবং গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা হয়েছিল- যা ভারতে জরুরি অবস্থা হিসেবে পরিচিত।
মোদি ভারতকে শাসন করেছেন এমন কঠোরতার সঙ্গে, যা ইন্দিরা গান্ধীর সময়কালকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তিনি কোনো ভিন্নমত সহ্য করেন না এবং এমন একজন শক্তিশালী হিন্দু জাতীয়তাবাদী যোদ্ধার ভাবমূর্তি প্রকাশ করেছেন, যে কিনা দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকসে’র মাধ্যমে। তার সমর্থকরা হৈচৈ করে এ রীতি সমর্থন করছেন এবং মোদি-মাস্ক পরে তার নির্বাচনী প্রচারণাগুলোতে ভিড় করছেন। ২৩ মে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর স্পষ্ট হবে ভারত মোদিকেই সমর্থন দিচ্ছে নাকি তাকে অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করছে; যেমনটি তারা ইন্দিরা গান্ধীকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার পরের নির্বাচনে।
ইন্দিরা ছিলেন সর্বশেষ নেতা যিনি ভারতের রাজনীতিতে একইসঙ্গে অর্জন করেছিলেন জনপ্রিয়তা ও কর্তৃত্ববাদ। বর্তমানে তেমনটিই উপভোগ করছেন মোদি। ইন্দিরা ক্ষমতায় এসেছিলেন তার পিতা, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর দুই বছর পর, যিনি ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৬৪ সালে নিজের মৃত্যু পর্যন্ত ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নেহরুর একমাত্র সন্তান এবং তার ১৭ বছরের শাসনকালের একমাত্র বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে ইন্দিরা বিশ্বজুড়ে নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছেন। তিনি ছিলেন সেক্যুলার, উদার, বহুভাষী এবং শিল্প-সাহিত্য অনুরাগী; মোদি যেমনটি নন।