ভারতে আজ সোমবার লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট চলছে। ভোট হচ্ছে দেশের সাতটি রাজ্যের ৫১টি আসনে। এই দফায় সবচেয়ে কম আসনে ভোট হলেও বেশ কয়েকজন তারকা প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে। তালিকায় রয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে আরও অনেকে।
এই আসন গুলির মধ্যে ৪০টিতেই ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জিতেছিল বিজেপি। এবার তারা কতগুলি আসন নিজেদের দখলে রাখতে পারে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। এই দফার ভোট শেষ হয়ে গেলে মোট ৪২৪টি আসনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে। বাকি থাকবে আর মাত্র ১১৮টি আসনের ভোট। আগামী ১২ এবং ১৯ মে এসব কেন্দ্রে ভোট হবে।
সোমবার ভোট চলছে উত্তর প্রদেশের ১৪টি আসনে। রাজস্থানে ভোট হচ্ছে ১২টি আসনে। পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্যপ্রদেশের সাতটি করে আসনে ভোট হচ্ছে। এছাড়া বিহারের পাঁচটি এবং ঝাড়খণ্ডের চারটি আসনেও ভোট হচ্ছে আজ। পাশাপাশি জম্মু কাশ্মীরের লাদাখ লোকসভা কেন্দ্র এবং অনন্তনাগ লোকসভার কেন্দ্রের পুলওয়ামা এবং সোপিয়ানে ভোট হচ্ছে।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী উত্তরপ্রদেশের অমেথি আসন থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এবার জিতলে টানা চারবার জিতবেন তিনি। তাকে টক্কর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। ২০১৪ সালে স্মৃতিকে হারিয়েই সংসদে যান রাহুল। এবার কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে।
পাশের রায়বরেলী আসন থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন ও কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। এবার জিতলে তারও পরপর চারবার নির্বাচনে জেতা হবে। এই দুজনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং নিজের লখনউ আসন থেকে লড়াই করছেন।
উত্তরপ্রদেশের যে ১৪টি আসনে আজ ভোট হচ্ছে তার মধ্যে ১২টিতেই গতবার বিজেপি জিতেছিল। রাহুল এবং সোনিয়ার কেন্দ্র ছাড়া আর কোথাও বিরোধী প্রার্থীরা জিততে পারেননি। এবার উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিরোধী জোট হয়েছে। যদিও মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদবের এই জোটে কংগ্রেসের জায়গা হয়নি তবু গান্ধী পরিবারের দুই সদস্যের আসনে কোনও প্রার্থী দেওয়া হয়নি। সোমবার মায়াবতী জানিয়েছেন, নিজেদের কেন্দ্রে মহাজোটের সমস্ত ভোট রাহুল এবং সোনিয়া-ই পাবেন।
উত্তরপ্রদেশের ১৪টির মধ্যে ১২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে সপা এবং বসপা জোট। এর মধ্যে মায়ার দল লড়ছে পাঁচটি আসনে বাকি সাতটি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি।
এবার অনন্তনাগে তিনবারে ভোট নেওয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে কখনও একটি লোকসভা কেন্দ্রের ভোট এতগুলি ভাগে নিতে হয়নি। তবে নির্বাচনের সামান্যতম উত্তাপ পুলওয়ামাতে নেই। রাজনৈতিক দলগুলির প্রচার হয়নি বললেই চলে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা মনে করছেন, এখানে খুব কম ভোটারই ভোট দিতে আসবেন।
গত ডিসেম্বর মাসে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। পঞ্চম দফায় সোমবার সে রাজ্যের কয়েকটি আসনে ভোট হচ্ছে। কংগ্রেস আশা করছে এবার মধ্যপ্রদেশে তাদের ফল ভালো হবে। গত লোকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশের ২৯টি আসনের মধ্যে ২৭টিতে কংগ্রেস পরাজিত হয়েছিল, জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এবার পদ্ম শিবিরের আসন সংখ্যা কমবে বলেই দাবি কংগ্রেসের।
বিহারের পাঁচটি আসনের মধ্যে রয়েছে হাজিপুর এবং শরণ। হাজিপুর এনডিএ-র জোট সঙ্গী রামবিলাস পাসোয়ানের খাস তালুক। অন্যদিকে শরণ কেন্দ্রে বরাবরই লালু দলের শক্তি বেশি।
লোকসভা নির্বাচন শুরুর আগে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে কাশ্মীরের জঙ্গি হামলা নিয়ে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে জঙ্গি হামলায় ৪০ জনের বেশি সিআরপিএফ জাওয়ান নিহত হয়। এই পুলওয়ামাতেও ভোট চলছে। এই জায়গাটি অনন্তনাগ লোকসভা আসনের অন্তর্গত। আর এই আসনের অন্যতম প্রার্থী হচ্ছেন জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
ঝাড়খণ্ডের চারটি মাও অধ্যুষিত কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে আজ। নিরাপত্তার খাতিরে বিকেল চারটের সময় ভোট শেষ হয়ে যাবে এই সমস্ত কেন্দ্রে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা থেকে শুরু করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার মতো প্রার্থী লড়াই করছেন ঝাড়খন্ড থেকে।