পবিত্র ঈদুল আজহার ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এবার পর্যটক এসেছে কম। বিশেষ ছাড়ের পরও পাঁচ শতাধিক হোটেলের অধিকাংশ কক্ষ খালি রয়েছে বলে জানান মালিকেরা।
আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে বুকিং হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ। আরও ৬৮ শতাংশ কক্ষ খালি পড়ে আছে। এর কারণ হিসেবে হোটেল মালিকেরা তিনটি কারণ তুলে ধরেন। ১. বৈরী পরিবেশে সমুদ্র উত্তাল থাকলেও বৃষ্টির সঙ্গে গরমও আছে। এমন পরিবেশে পর্যটকেরা সৈকত ভ্রমণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন; ২. প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে নৌচলাচল বন্ধ; ৩. অন্যান্য এলাকার তুলনায় কক্সবাজারে ভ্রমণে খরচ বেশি। খাবারদাবারসহ সবকিছুর দাম অতিরিক্ত হারে আদায় করা হয়।
সমুদ্রসৈকতের কাছে কলাতলীতে ছয়তলার ওয়েল পার্ক রিসোর্টে কক্ষ আছে ৪৪টি। আজ বিকেল পর্যন্ত কক্ষ বুকিং হয়েছে ৭টি। কারণ জানতে চাইলে রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদে সৈকত ভ্রমণে পর্যটকেরা খুব একটা আগ্রহ দেখান না।
সৈকত এলাকার অন্তত ৩০টি হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ হোটেলের ৭০-৮০ শতাংশ কক্ষ খালি পড়ে আছে। কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড় দিয়ে পর্যটক আনা যাচ্ছে না জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদের প্রথম দিন সোমবার (১৭ জুন) সৈকত ভ্রমণে এসেছে মাত্র ৫ শতাংশ, দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার এসেছে ১১ শতাংশ। আগামীকাল বুধবার (১৯ জুন) আসছেন আরও ১৬ শতাংশ পর্যটক। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউস রিসোর্ট ও কটেজগুলো দৈনিক পর্যটকের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজারের মতো। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০ জুন থেকে আরও কয়েক দিন ২০-২৫ হাজার পর্যটক ভ্রমণে আসতে পারেন।
সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদুল ফিতরের টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে এসেছিলেন ছয় লাখের মতো পর্যটক; কিন্তু ঈদুল আজহার ছুটিতে এমনিতে সৈকতে লোকসমাগম কম থাকে। এবারও তা–ই হচ্ছে। তারপরও পর্যটক টানতে হোটেল গেস্টহাউস রিসোর্টগুলো কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু সাড়া মিলছে না।
উত্তাল সৈকতেও হাজারো পর্যটক
মঙ্গলবার বেলা ১১টা। সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট। বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল। আকাশও মেঘলা। এরপরও হাজারো পর্যটক কোমরপানিতে নেমে লোনাপানিতে শরীর ভেজাচ্ছেন। অনেকে টিউবে ভেসে বড় বড় ঢেউয়ের সঙ্গে দুলছেন।
দুপুর ১২টার দিকে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। এক কিলোমিটার সৈকতে বিকেল গড়াতেই মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত ১৫ হাজারে। তবে বেশির ভাগই স্থানীয় বাসিন্দা।
স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সৈকতে নামেন ঢাকার মতিঝিল এলাকার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। কোমরসমান পানিতে নেমে গোসল করেন কতক্ষণ। লাইফ গার্ড কর্মীদের নিষেধ এবং বাঁশির শব্দে পানি থেকে উঠে পাশের কিটকটে (চেয়ার ছাতা) বসে পড়েন।
হাবিবুর রহমান (৫২) বলেন, সন্তানদের আগ্রহে এবার তাঁরা ঈদের ছুটি কাটাতে কক্সবাজার আসেন। ওঠেন কলাতলীর একটি রিসোর্টে। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় বেশিক্ষণ লোনাপানিতে শরীর ভেজানো হলো না।
সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বেসরকারি সি-সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, এ সময়ে সাগর এমনিতে উত্তাল থাকে; কিছু পর্যটকের সমুদ্রের উত্তাল রূপ পছন্দ। উত্তাল সাগরে গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে লাল নিশানা ওড়ানো হলেও অনেকে তা মানছেন না।
মা-বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে সৈকত ভ্রমণে আসে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া জেবুননেছা। সৈকতে বালুচরে বসে সে ঘর বানাচ্ছিল। জেবুননেছা জানায়, উত্তাল সাগরের গর্জন তার খুব ভালো লাগে।
কুমিল্লার দাউদকান্দির ব্যবসায়ী সেকান্দার হোসেন বলেন, ঈদের ছুটিতে টানা কয়েক দিন স্কুল বন্ধ। পরিবার–পরিজন নিয়ে সৈকতে ছুটে এসেছেন। কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে কিছুটা ছাড়ও পেয়েছেন; কিন্তু রেস্তোরাঁতে খাবার দাম অনেক বেশি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধ এবং হোটেল রেস্তোরাঁয় যেন অতিরিক্ত ভাড়া ও দাম আদায় করতে না পারে, তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পর্যটক না থাকায় দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, ইনানী সৈকত, পাটোয়ারটেক, রামুর বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র ফাঁকা হয়ে পড়েছে। তবে আগামীকাল থেকে এসব কেন্দ্রে পর্যটকের সমাগম বাড়তে পারে।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। সমুদ্রসৈকত, মেরিন ড্রাইভসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।