মানুষের স্বভাবই হল কৌতূহলী আর অনুসন্ধানী হয়ে ওঠা। তা সে যতই ভয়ের কারণ হোক না কেন, মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাই হল কৌতুহলের পিছনে ছোটা। বিজ্ঞানের পরেও এমন কিছু আছে, যার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া ভার। বিজ্ঞানের কাছে তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। আত্মা এবং ভূতের সেসব কাহিনি তাড়া করে বেরিয়েছে মানুষকে।
ইতালির পোভেগ্লিয়া
ভারত এবং জাপান থেকে যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিটি দেশেই ভুতুড়ে গল্প এবং ভুতুড়ে জায়গার কাহিনি রয়েছে। তেমনই বিশ্বের সবচেয়ে ভুতুড়ে স্থানগুলির মধ্যে একটি হল ইতালির পোভেগ্লিয়া। পোভেগ্লিয়ার সুন্দর দ্বীপ ভেনিস থেকে খানিক দূরেই। দ্বীপটিতে একসময় প্লেগে আক্রান্তদের জন্য কোয়ারেন্টাইন হোম করা হয়েছিল। মানসিক বিকারগ্রস্তদেরও চিকিৎসা করা হয়েছিল ওই দ্বীপে। বর্তমানে এই দ্বীপটিতে অশুভ আত্মাদের বাস বলে প্রচার। লোকজনকে ওই দ্বীপে যেতে দেওয়া হয় না। ওই দ্বীপে গেলে ফিরে আসা দুরুহ ব্যাপার।
ইংল্যান্ডের হাইগেট কবরস্থান
উত্তর লন্ডনে অবস্থিত কবরস্থানটি ১৮৩৯ সালে পাওয়া গিয়েছিল। পৃথিবীর সবথেকে ভুতুড়ে স্থানগুলির মধ্যে একটি হল এই হাইগেট কবরস্থান। ওই সমাধিস্থলে ১,৭০,০০০ জনেরও বেশি লোকের সমাধিস্থ হয়েছেন। এখান থেকে বেশ কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সবথেকে ভয়ঙ্কর গল্পটি ৭ ফুট লম্বা ভ্যাম্পায়ারের। ওই ভ্যাম্পায়ারের সম্মোহনী লাল চোখ রয়েছে। ওই কবরস্থানের তাপমাত্রা আশ্চর্যজনকভাবে কম হওয়ার পিছনেও ভ্যাম্পায়ার বলে মনে করা হয়।
রোমানিয়ার হোইয়া-বাসিয়া বন
ট্রানসিলভেনিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামেও পরিচিত রোমানিয়ার এই হোইয়া-বাসিয়া বন। এখানে বেশ কিছু ভীতিকর কার্ভি গাছ রয়েছে। ১৯৬৮ সালে একজন প্রযুক্তিবিদ রোমানিয়ার ওই বনের ঠিক উপরে একটি ‘ইউএফও’-র একটি ছবি তোলেন। তারপরই ওই বনটি বিশ্বের সবথেকে ভুতুড়ে জায়গার একটি হয়ে ওঠে। জনশ্রুতি রয়েছে, এখানে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে দর্শনার্থীরা গেলেই অদৃশ্য হয়ে যান। যাঁরা এখান থেকে ফিরে আসে তাঁরা শারীরিক নানা সমস্যায় পড়েন।
ফ্রান্সের শ্যাটো ডি ব্রিসাক
শ্যাটো ডি ব্রিসাক ফ্রান্সের সবথেকে লম্বা এবং সবথেকে সুন্দর দুর্গগুলির মধ্যে একটি। এই দুর্গটি সাত তলা। এই সু-উচ্চ দুর্গটিকে গ্রিন লেডি বা শার্লটের ভূতের বাড়ি বলে উল্লেখ করা হয়। জনশ্রুতি আছে যে, শার্লট ছিলেন রাজা সপ্তম চার্লসের অবৈধ কন্যা। তাঁর স্বামী তাঁর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। তাঁকে হত্যা করার সময় তাঁর পরনে ছিল সবুজ পোশাক। এরপর তাঁর আত্মাকে টাওয়ার রুমে ঘুরতে দেখা গিয়েছে, এমনটাই দাবি করেছেন অনেকে।
ক্যালিফোর্নিয়ার দ্য কুইন মেরি দ্য কুইন মেরি সমুদ্রের একটি লাইনার, যা ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে স্থায়ীভাবে রয়েছে। ডক হওয়ার আগে সমুদ্রে ৩০ বছর ধরে যাত্রা করেছিল ওই দ্য কুইন মেরি। ৫০ জনেরও বেশি লোক ‘দ্য কুইন মেরি’-র ভিতরে মারা যান। তারপর থেকে জাহাজটিতে তাঁদের আত্মারা বিরাজ করছে বলে প্রচার। দ্য কুইন মেরি হয়ে উঠেছে ভুতুড়ে জাহাজ।
জার্মানির বার্গ উলফসেগ
বার্গ উলফসেগ জার্মানির উলফসেগে অবস্থিত। ৮০০ বছরেরও বেশি পুরনো দুর্গ। এই স্থানটিতে একজন মহিলা ভূতের আনাগোনা জানেত পারা যায়। ওই মহিলা ভূত পথচারীদের ভয় দেখায়। গুজব রয়েছে, তিনি ক্লারা ভন হেলফেনস্টাইনের ভূত। তিনি তাঁর স্বামীর হাতে নিহত হন। দুর্গটি সপ্তাহান্তে এবং সরকারি ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। কিন্তু আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় দর্শনার্থীদের।
নরওয়ের আকার্সাস ক্যাসেল
আকার্সাস ক্যাসেল একটি দুর্গ এবং কারাগার। ১২৯০-এর দশকে নির্মিত হয়েছিল তা।বর্তমানে এটি বিশ্বের সবথেকে ভুতুড়ে স্থানগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। এখানে নাৎসিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বাস, এই দুর্গে এক মহিলা ও একটি কুকুরের ভূত রয়েছে। যাঁরা এই ভূতকে বা আত্মাকে দেখতে পান, তাঁদেরই মৃত্যু ঘটে।
ভারতের ভানগড়
ভারত এবং এশিয়ার সবথেকে ভুতুড়ে স্থানের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভানগড় দুর্গ। রাজস্থানের বিধ্বস্ত শহর ভানগড়ে অবস্থিত দুর্গটি। এই দুর্গের ভুতুড়ে ইতিহাস রয়েছে। ইন্টারনেট বেশ কয়েকটি ভয়াবহ গল্প ছড়িয়ে পড়েছে এই ভানগড় শহর ও দুর্গ নিয়ে। সূর্যাস্তের পর ভানগড় দুর্গে যাওয়া বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়, যা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দুর্গের বাইরে ভারত সরকারের একটি সতর্কীকরণ বোর্ড রয়েছে, যাতে বলা হয়েছে সূর্যাস্তের পর দর্শনার্থীদের এই স্থানে প্রবেশের অনুমতি নেই।
কলকাতার ভুতুড়ে স্থান
বিশ্বের এই আট স্থানই শুধু নয়, কলকাতাতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন অনেক ভুতুড়ে স্থান। যার কীর্তি-কাহিনি শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে। তার মধ্যে প্রথমেই আসবে ন্যাশনাল লাইব্রেরির কথা। এছাড়া কলকাতার মধ্যেই রয়েছে হেস্টিংস হাউস, লোয়ার সার্কুলার গোরস্থান, দক্ষিণ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থান, রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন ও মহাকরণ, এমনকী মল্লিকঘাট, নিমতলা শ্মশানঘাটে আজও দেখা যায় ভুতুড়ে ক্রিয়াকলাপ।