সৌন্দর্য আর রহস্য কি সব সময় পাশাপাশি অবস্থান করে? এই পৃথিবীতেই এমন কিছু ভয়ংকর সুন্দর জায়গা রয়েছে, যেখানে যেতে পারলে আপনি হয়ত অজান্তেই বলে উঠবেন ওয়াও! এই স্থানগুলো সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে থাকলেও এর পরতে পরতে রয়েছে মৃত্যুর আশঙ্কা।
১. ডোর টু হেল, তুর্কমেনিস্তান
বাংলায় যাকে বলা যায় নরকের দরজা। নামটা শুনেই ভয় লাগার কথা যে কারো। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মূলত এটি একটি প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্গীরণস্থল। মরুর বুকে প্রায় ৭০ মিটার ব্যাস ও ৩০ মিটার গভীর এই গর্ত কয়েক দশক ধরে জ্বলছে। ১৯৭১ সালে, তুর্কমেনিস্তানের ড্রাভা শহরের কারাকুম মরুভূমিতে গ্যাসের খনির সন্ধান মেলে। প্রাথমিকভাবে গবেষণা করে দেখা যায় এটি বিষাক্ত গ্যাস। এই বিষাক্ত গ্যাস যাতে চারদিকে ছড়িয়ে গিয়ে আশেপাশের এলাকার ক্ষতি করতে না পারে এজন্য গ্যাস জ্বালিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন গবেষকরা।
গবেষকদের ধারনা ছিলো অল্প কয়েক দিনের মধ্যে এই বিষাক্ত গ্যাস শেষ হয়ে যাবে এবং আগুন নিভে যাবে। কিন্তু গবেষকদের অবাক করে দিয়ে ৪০ বছর ধরে সেখানে আগুন জ্বলছে। সেখানকার উত্তাপ এতো বেশি যে, কেউ চাইলেও ৫ মিনিটের বেশি সেখানে দাঁড়াতে পারবেন না। তবে রাতের বেলা এই দৃশ্য খুবই সুন্দর লাগে। অনেক দূর থেকেই শিখার উজ্জ্বলতা ভালোভাবে বোঝা যায়। ভ্রমণ পাগল মানুষদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।
২. এল কামিনিতো ডেলরে, স্পেন
মূলত এটি পাহাড়ের গা ঘেঁষা একটি ভয়ংকর রাস্তা। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর রাস্তা হিসাবে পরিচিত এল কামিনিতো ডেলরে। ২.৫ মাইল দীর্ঘ রাস্তাটি ভূমি থেকে ৩৩০ ফুট উঁচুতে স্পেনের উত্তর গাইতনেজ জর্জে অবস্থিত। এটির আরেক নাম কিংস পাথওয়ে। পথটি কংক্রিট দিয়ে তৈরি এবং এর ওপর স্টিলের পাত বিছানো।
পথটি অতিক্রম করতে হলে ৪৫ ডিগ্রী খাড়া খাড়া পাথর বেয়ে উঁচুতে উঠতে হয়। যদি কারো পাড়ার চড়ার বা এমন রাস্তা পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে এ পথ অতিক্রম করা বোকার মতো কাজ হবে। কারণ, একটু এদিক-সেদিক হলেই পড়ে যাবেন গুয়াদালহোর্স এর গভীর নদীতে। যার ফলাফল মৃত্যু।
৩. মাদিদি ন্যাশনাল পার্ক
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া আন্দিজ পর্বত মালার অনেক উঁচুতে অবস্থিত মাদিদি ন্যাশনাল পার্ক। আন্দিজ থেকে ৭,০০০ বর্গমাইল দূরে আমাজনের গহিনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পসরা বসিয়েছে এই পার্ক। এখানে রয়েছে, বরফাবৃত পর্বতশ্রেণী এবং অসাধারণ জীব ও উদ্ভিদ জগত। চারদিকে সবুজ গাছপালায় ঘেরা বিশার আকৃতির ছাদের মতো লাগে। এই কারণে বলিভিয়াকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়।
এটি বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার বায়োডাইভার্স এলাকার একটি। বেনি নদী বেয়ে, রাডেনবাক ও জঙ্গলের কর্দমাক্ত ভূমি পেরিয়েই পৌঁছাতে হয় মাদিদি পার্কে। তবে যতটা সহজ মনে হচ্ছে বাস্তবের রাস্তা এতটি সোজা নয়। সেখানে পৌঁছানোর পথে পদে পদে রয়েছে বিপদ। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা পার্কেও রয়েছে বিপদের হাতছানি। পার্কে রয়েছে অসংখ্য বিষাক্ত গাছপালা। এর সংস্পর্শে আসলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন যে কেউ। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৪. খুনি হ্রদ
এই হ্রদের অবস্থান ওক পর্বতমালার অন্তর্গত ক্যামেরুন এর উত্তর পশ্চিম এলাকায়। এর আসল নাম নিয়োস (NYOS) হলেও স্থানীয় জনগণ এটাকে খুনি হ্রদ নামে ডাকে। ১৯৮৬ সালের দিকে এটি প্রথম দেখা যায়। মূলত এটি একটি মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালা মুখের পাশে অবস্থিত।
হ্রদটি লাভায় পরিপূর্ণ থাকে সবসময়, তারপরও এর উপরিভাগ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। হ্রদের মধ্য থেকে নির্গত হতে থাকে কার্বন ডাই অক্সাইড এর বুদবুদ। এই বুদবুদ গ্যাস চারদিকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে আশপাশের এলাকার প্রায় ১৭০০ মানুষ এবং ৩ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই এর নাম হয় খুনি হ্রদ।
৫. অতৃপ্ত জেলেদের আত্মা ঘোরে যেখানে
পার্কি বিচ আত্মা, ভূত আর ভৌতিক কাহিনীর জন্য বিখ্যাত। প্রায় ১৫ কিলোমিটার লম্বা, ৩০০-৩৫০ ফুট চওড়া এবং ২০ কিলোমিটার ঝাউবনযুক্ত এই সৈকতটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। কিন্তু ভৌতিক স্থানের তালিকায় একে সবার ওপরে রাখা হয়।
সুন্দরে ঘেরা এই সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে প্রচলন আছে ভৌতিক কাহিনীর। সন্ধ্যার পর এই স্থানের থেকে ভেসে আসে অদ্ভুত পদশব্দ, চিৎকার ও ভূতুড়ে আওয়াজ, যা যে কারো মনে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। মনে হয় শব্দগুলো দূর থেকে ভেসে আসছে, আবার মনে হয় যেন পানির ভেতর থেকে আসছে। মাঝে মধ্যে মনে হয় পার্শ্ববর্তী বন থেকে আসছে। আর এই শব্দগুলো যেনো কৌতূহলী মানুষকে পানিতে টেনে নিয়ে যেতে চায়।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের অনেকে জানিয়েছেন, তারা মাছ ধরতে গভীর সাগরে গেলে এমন অনেক লোককে দেখা যায়, যাদের আগেই মৃত্যু হয়েছে। তারা মনে করেন, সাইক্লোন বা কোনো কারণে সাগরে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের আত্মা সেই জায়গায় এখনো চলাফেরা করে।