ঈদ-পরবর্তী আনন্দ উদযাপন করতে মিরসরাইয়ের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে বিপুল পরিমাণ পর্যটকদের সমাগম ঘটেছে।
ঈদের এক সপ্তাহ পার হলেও ভ্রমণের রেশ কাটেনি ভ্রমণপিপাসুদের। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে এখনও লোকে লোকারণ্য। ঈদের ছুটিতে নানান প্রান্তে ঘুরছেন পর্যটকরা। এমনিতে সুনাম আছে মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পটগুলোর।
এই উপজেলায় আছে ৮ স্তর বিশিষ্ট খৈয়াছড়া ঝরনা। এই ঝরনার সুনাম আছে দেশ-বিদেশে। এই ঝরনা দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু পর্যটনস্পট।
একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সাগর। মাঝখানে বয়ে গেছে দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেল সড়ক। এসব পর্যটন স্পটগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে এই উপজেলায়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এবার পর্যটকদের ঢল নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে গড়ে ওঠা সমুদ্রসৈকতে। সমুদ্রসৈকত দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন সেখানে হাজার অধিক মানুষ। খুব কাছ থেকে দেখছেন সমুদ্রসৈকত।
কেউ যাচ্ছেন পরিবার পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে, আবার কেউ যাচ্ছেন নিরিবিলি প্রাকৃতিক বাতাসে সময় কাটাতে। খুব কম সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই স্পট। এখানেও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ঘুরতে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সমুদ্র পাড়ে গিয়ে দেখা যায় পর্যটকদের মিলনমেলা। অনেকে সাগর পাড়ে বসে বসে বিশুদ্ধ বাতাসে হারিয়ে গেছে। অনেকে খোশগল্পে মেতে উঠেছেন। কেউ কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আবার অনেকে গ্রুপ ছবি তুলছেন। ছোট শিশুরা খেলাধুলায় মেতেছেন।
কথা হয় ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা প্রবাসী রুবেল দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রবাসে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি এই সমুদ্রসৈকত। দেশে এসে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসছি এখানে। পরিবেশ অনেক ভালো ও এখানকার মানুষের ব্যবহারেও আমি মুগ্ধ।’
ভাই-বোন নিয়ে ঘুরতে আসেন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন শাহীন। তিনি বলেন, ‘এই স্পটে আমি আগেও এসেছি। এবার ভাই বোন নিয়ে আসছি। তাদের নিয়ে আসলে কর্মব্যস্ততার কারণে ঘোরাঘুরি হয় না। এবার বোন বায়না ধরলো সে ঘুরতে যাবে। তাই এখানে আসছি। তারাও উপভোগ করছেন।’
কথা হয় সীতাকুণ্ডের বড় দারগারহাট থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, স্ত্রীর ইচ্ছেই এই স্পটে আসা। এসে অনেক ভালো লাগছে।
এখানকার পরিবেশ বেশ চমৎকার। অন্যান্যবার ঈদের ছুটি পাইলেও তেমন ঘুরা হয়না। এবার বাড়তি দুদিন ছুটি নিয়ে ঘুরছি স্ত্রী ও সন্তাদের নিয়ে। মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পটগুলো বেশ উপভোগ্য। এর আগে মহামায়ায় যাওয়া হয়েছে। এবার এখানে এসেছি।
একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সাগর
তবে শিল্পনগরে প্রবেশেমুখে আনসার দ্বারা হয়রাণির শিকার হতে হচ্ছে অনেক পর্যটকদের। তারা বিভিন্ন অজুহাতে গাড়ি আটকে রাখে। গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে।
রণি ভৌমিক নামে এক পর্যটক অভিযোগ করেন, সৈকতে প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে আনসার সদস্যরা মানুষকে হয়রাণি করে। টাকা ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না। লোকবুঝে ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে নেয়। তাদের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করলে মানুষ এখানে ঘুরতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন আনসার কমান্ডার রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা টাকা নেয় না। যেহেতু এখানে দেশি-বিদেশি অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তাই অনেক সময় বাইরে থেকে আসা গাড়ি তল্লাসি করতে হয়।’