এই ইট-পাথরের শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের জন্য আকুল থাকে মন। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে :
১. ভ্রমণে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠলে অনেকের বমি বা বমি ভাব হয়, অর্থাৎ মোশন সিকনেস হয়। এরা স্টিমেটিল বা ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ ভ্রমণের ৩০ মিনিট আগে খেয়ে নেবেন, তাহলে এমন সমস্যা হবে না। ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
২. সড়কপথে ভ্রমণে গেলে বাসচালককে বলুন, ধীরে গাড়ি চালাতে। ঠান্ডা হাওয়া থেকে বাঁচতে গাড়ির জানালা পুরোপুরি খোলা রাখবেন না। অল্প একটু খোলা রাখবেন, যাতে শীতল হাওয়ায় আপনার সর্দি না লেগে যায়, আবার অক্সিজেনের অভাবও না হয়।
৩. কখনো ভরা পেটে ভ্রমণ করা উচিত নয়। পেট একটু খালি রেখে বাস-ট্রেনে ওঠা ভালো। হট কনটেইনারে ঘরের তৈরি খাবার, যেমন—পিঠা, পায়েস, চিড়া, মুড়ি, কলা, ফল, উন্নতমানের বিস্কুট নেওয়া যেতে পারে। খাবার হতে হবে সহজপাচ্য। যাঁদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা পেপটিক আলসার ডিজিজ আছে, তাঁরা যেন পেট একেবারে খালি না রাখেন। বিস্কুট বা সঙ্গে রাখা খাবার খেতে পারেন। তবে সব সময়ের মতো এখানেও ঝাল-মসলাযুক্ত ও গুরুপাক খাবার খাবেন না।
৪. যাঁদের আইবিএস বা কোনো ধরনের আন্ত্রিক রোগ আছে, তাঁরা দুধ বা দুধের তৈরি খাবার ভ্রমণে খাবেন না। এ থেকে ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা হতে পারে। ভ্রমণে বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। নিজের সঙ্গে রাখা পানি মাঝেমধ্যে পান করতে হবে। অবশ্য মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা কোন ট্রান্সপোর্টে কেমন আছে, তা জেনে যাত্রাপথে কিছু খাবেন বা পান করবেন। তবে মনে রাখবেন, দীর্ঘ ভ্রমণে পানি কম খেলে বা প্রস্রাব চেপে রাখলে প্রস্রাবে ইনফেকশন হতে পারে। নারীদের এ সমস্যা বেশি হয়। এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যান্টিবায়োটিক সিপ্রোফ্লক্সাসিন খেতে হবে।
৫. দীর্ঘ ভ্রমণে অনেকক্ষণ বসে থাকলে পা ফুলে যেতে পারে। এ জন্য কিছুক্ষণ পরপর দাঁড়াবেন। ট্রেনে গেলে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন আর নিজের গাড়ি নিয়ে গেলে মাঝপথে বার কয়েক থামতে পারেন।
৬. ভ্রমণে গিয়ে পেটের গণ্ডগোল হয় অনেকেরই, তাই খাওয়ার সময় স্বাদের চেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বেশি নজর দিন। আর দুটোই একসঙ্গে পাওয়া গেলে তো কথাই নেই। এ সময় রাস্তার পাশের বা ফুটপাতের খাবার খাবেন না। রেস্টুরেন্টে খেলেও খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। আমরা অনেকে খাওয়ার আগে হাত ধুই ঠিকই, তবে সাবান ব্যবহার করি না। এ অভ্যাস ত্যাগ করাই সমীচীন।
৭. ভ্রমণে রোদে পুড়ে অনেকেরই ত্বকের ক্ষতি হয়। সান বার্নে এমনটি হয়। এ জন্য মাথা ও মুখ ঢাকে এমন ক্যাপ ও রোদচশমা পরা জরুরি। রোদচশমা কেনার ক্ষেত্রে স্টাইলের সঙ্গে সঙ্গে এটা যেন চোখের চারদিকে পর্যাপ্ত জায়গা ঢাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। মুখে ও শরীরের অনাবৃত অংশে সানস্ক্রিন লাগান। আশপাশের মানুষজন কী মনে করবে, তা চিন্তা করে অনেকেই সানস্ক্রিন লাগাতে অস্বস্তিতে ভোগেন। তবে এ থেকে মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই ভ্রমণে সবারই সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। ৩০ থেকে ৪০ এসপিএফসমৃদ্ধ (সান প্রটেক্টর ফ্যাক্টর) সানস্ক্রিন ভালো।
৮. কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন, তার ওপর ভ্রমণের সতর্কতা অনেকখানি নির্ভরশীল। যেমন সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় গেলে রাতে ঘুমের সময় মশারি তো টাঙাবেনই, সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলেও শরীর যথাসম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। কক্সবাজার বেড়াতে গেলে ভাটার সময় পানিতে নামাই উচিত নয়। আর গুপ্তখালের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
আসলে আমাদের ছোটখাটো সতর্কতায় ভ্রমণে খুব বেশি নিয়মের বাঁধনে না থেকেও সুস্থ শরীরে আনন্দঘন ভ্রমণ উপভোগ করতে পারি আমরা।