পৃথিবী থেকে হারানোর পথে ১০ প্রাকৃতিক সম্পদ

পৃথিবী বড়ই বৈচিত্র্যময় যার রূপের নেই শেষ। অ্যামাজন থেকে ডেড সি পর্যন্ত এমন কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ আছে যেগুলো এখন অতিরিক্ত পর্যটন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। জেনে নিন এমন ১০টি প্রাকৃতিক সম্পদের কথা।

দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ:
The-Great-Barrier

আর মাত্র ৮০ বছর অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলের দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে রয়েছে ৪০০ রকমের প্রবাল, ৫০০ প্রজাতির মাছ এবং সামুদ্রিক কচ্ছপসহ ৪০০০ ধরনের মলাস্ক। কিন্তু পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রবালদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য শেওলা অনেক বেশি হারে ছড়িয়ে পড়ছে। অর্ধেক রিফ ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে। বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বাড়তে থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচয়ে বড় এই প্রবালের মৃত্যু হতে পারে।

অ্যামাজন রেইনফরেস্ট: ধুঁকছে পৃথিবীর ফুসফুস
Amazon Rain Forest

দক্ষিণ আমেরিকার নয়টি দেশে ছড়িয়ে থাকা এই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্টে রয়েছে অনেক রকমের গাছপালা এবং প্রাণী। সবচেয়ে বেশি কার্বন শুষে নিতে সক্ষম বনাঞ্চলও এটি। ব্যাপকভাবে বন উজাড় করা হচ্ছে সেখানে। গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাছ ধ্বংস হয়েছে চলতি ২০২০ সালে। প্রাণী হত্যার হারও বাড়ছে। কোনও কোনও জায়গায় বৃষ্টিপাত এক চতুর্থাংশ কমেছে।

ডারউইনের বিপন্ন স্বর্গ

Galapagos Islands

দক্ষিণ অ্যামেরিকার পশ্চিম উপকূল থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে ইকুয়েডরের গালপাগোস দ্বীপ। বহু বৈচিত্রপূর্ণ প্রাণী, গাছপালা ও ভলকানিক আর্কিপেলাগোর কারণে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে এটি। এখানকার কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের বিবর্তনই ডারউইনকে প্রেরণা জুগিয়েছিল। পর্যটকদের আনাগোনা, দূষণ এবং মাত্রাতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে এই প্রাকৃতিক ভূস্বর্গের ভবিষ্যৎও হুমকির মুখে।

হিমালয়: হিমবাহ গলছে, গড়ে উঠছে আবর্জনার পাহাড়
The Himalayas

উষ্ণায়নের কারণে আশঙ্কাজনক হারে হিমবাহ গলছে। আরেকদিকে হিমালয় ধীরে ধীরে ঢাকা পড়ছে আবর্জনার স্তূপে। গত চার দশকে দশ হাজারেরও বেশি বার হিমালয়ের চূড়ায় উঠেছে মানুষ। কতজন পর্বতারোহী সফল হয়েছেন, কতজন ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন বা কতজনের জীবনাবসান হয়েছে বন্ধুর পথে, তার প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। তবে সবাই মিলে হিমালয়ে যে পরিমাণ আবর্জনা ফেলেছেন এবং আবর্জনা যে হারে বাড়ছে, তাতে হিমালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও জাগছে শঙ্কা।

জোসুয়া ট্রি ন্যাশনাল পার্ক: জোসুয়া গাছই শেষ হওয়ার পথে

Joshua Tree National Park

ক্যালিফোর্নিয়ার জোসুয়া ট্রি ন্যাশনাল পার্কে জোসুয়া গাছ কতদিন থাকবে কে জানে! উষ্ণায়ন রোধ করা যাচ্ছে না, খরার কারণে জোসুয়ার চারা মরে যাচ্ছে বড় হওয়ার আগেই, পরাগায়নও পড়ছে প্রতিকুলতার মুখে। জোসুয়া ট্রি ন্যাশনাল পার্কে জোসুয়া গাছ বেশিদিন থাকবে কী করে?

কিলিমানজারো : বরফ না থাকলে কী হবে!
Kilimanjaro

আফ্রিকার উচ্চতম পর্বত কিলিমানজারোর ভবিষ্যৎকেও শঙ্কায় ঘিরে ফেলছে উষ্ণায়ন। কিলিমানজারোর তিন আগ্নেয় শঙ্কুর সবচেয়ে বড়টি, অর্থাৎ কিবো নামের শঙ্কুটি সমুদ্রপৃষ্ণ থেকে ৫৮৯৫ মিটার উঁচুতে গিয়ে ঠেকেছে। সেই শিখর থেকে বরফ গলে পড়ছে দ্রুত। গবেষকরা বলছেন, ১৯১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৮৫ ভাগ বরফই হারিয়েছে কিবোর শুভ্র শিখর।

মাচু পিচু: পদদলিত সভ্যতা

Machu Picchu

প্রতি বছর অন্তত ১৫ লাখ পর্যটকের পা পড়ে পেরুর এই বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া ইনকা নিদর্শনে। এত মানুষের হাঁটাচলায় যে কম্পন তৈরি হয় তাতে প্রাচীন এই কাঠামো ক্রমশ নড়বড়ে হচ্ছে।

লেক নিকারাগুয়া: খালে আসছে ‘কুমির’
Lake Nicaragua

প্রস্তাবিত নিকারাগুয়া খাল হয়ে গেলে ক্যারিবীয় সাগরের সঙ্গে যুক্ত হবে প্রশান্ত মহাসাগর। মধ্য অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় হ্রদটিতে তখন ডিঙি নৌকা উধাও হয়ে যেতে পারে, শুরু হতে পারে বড় বড় অনেক কন্টেইনার জাহাজের আনাগোনা। পরিবেশবাদীরা শঙ্কিত। অনেক হাঙর আর করাতি মাছের আবাস, স্থানীয়দের পানীয় জলের আধার এই হ্রদের ইকোসিস্টেমই তো তাহলে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাবে!

‘মৃত সাগর’-এর মৃত্যু আসন্ন?

Dead Sea

বিশ্বের সবচেয়ে নীচু জলাধার ডেড সি ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। জর্ডান নদী থেকে পানীয় জল আহরণ করছে ইসরায়েল ও জর্ডান। তার প্রভাব পড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার নীচের ডেড সি-তে। প্রতি বছর গড়ে এক মিটারের মতো নেমে যাচ্ছে ডেড সি।

মালদ্বীপ: তলিয়ে যাচ্ছে সাগরে

Maldives

বিমানে চড়ে মালদ্বীপে যাওয়ার কথা ভাবছেন? গেলে দ্বীপদেশটি দেখে মুগ্ধ হবেন নিশ্চয়ই, সঙ্গে দেশটিকে একটু ডুবিয়েও আসবেন। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে শুধু আকাশপথেই যাওয়া যায় বলে ঘন ঘন বিমান চলাচলের বিরূপ প্রভাব পড়ছে জলবায়ুতে। উষ্ণায়নের কারণে প্রতিবছর ৩.৭ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। মালদ্বীপ দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র দেড় মিটার উঁচুতে। ফলে গোটা দেশটার সাগরে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে।