বান্দরবান ভ্রমন করতে গিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে পরিচয়

মো:হৃদয় সম্রাট :    সবুজ গাছপালা আর পাহাড়ে ঘেরা ছোট একটি শহর বান্দরবন। রাত্রিযাপন করেছিলাম বিলকিস নামক একটি স্বল্প ভাড়ার হোটেলে। হোটেলের সহকারিদের মধ্য একজনের নাম হল মনসুর। তিনি আমাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন,সারাদিন বান্দরবরন ঘুরে দেখার জন্য একটি টেম্পুও (সিএনজি) ভাড়া করে দিয়েছিলেন। মোটামুটি তার আর টেম্পু চালকের জন্য সারাদিনটা একটি লম্বা ভ্রমনের মধ্য দিয়ে পার হয়। নীলাচল থেকে শুরু করে শৈলপ্রপাত ছাড়াও মেঘলা,স্বর্ণ মন্দির আর সাঙ্গু নদীর পাঠা মাছ খাওয়া থেকে শেষ হয় আমার সেই ভ্রমন।

যেহেতু সারাদিন ভ্রমনে ছিলাম। তাই খুব ক্লান্ত হয়ে বাস কাউন্টারে গিয়ে লম্বা একটি ঘুম দেই।শ্যামলী বাসে রাত আটটার টিকিট কাটা ছিলো তাই হয়তোবা আমাকে আর তারা ঘুম থেকে ডাকে নি। সেই ঘুমটা আমার ভাঙ্গে একটা অদ্ভূত মানুষকে দেখে। ঘুম ভাঙ্গতেই সে এসে হাত পাতে কিছু ভিক্ষার আশায়। যেহেতু আমার বান্দরবন ভ্রমনের শেষ দিন ছিলো তাই পকেটে ছিলো মাত্র একশত টাকার একটি নোট। তাই তাকে বলি দশ টাকা রেখে বাকি নব্বই টাকা ফেরত দিতে। সে দশ টাকা পাচটাকা করে বের করতে থাকে আর আমি বসে থাকি নব্বই টাকা পাবার আশায়। সে হয়তোবা নিজেও বুঝতে পারছে না যে আমি নব্বই টাকাই নিবো তার কাছ থেকে। আস্তে আস্তে করে সে আমাকে নব্বই টাকা দেয়। পরে তার চেহারা দেখে কেন যেন একটা মায়া অনুভব করলাম। তাই আরো দশ টাকা বেশি দিয়ে দেই। যেহেতু সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি তাই খেয়াল করনি তার হাতের দিকে। তার ডান হাতে একটা পত্রিকার কাগজ ছিলো। আমি কৌতুহলবশত বল্লাম চাচা কাগজটা দেখি। আমি কাগজটা হাতে নিতেই চোখটা ছানাবড়া হয়ে গেল। অনেক পত্রিকায় বড় ভাইয়াদের লেখা পড়েছি মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু ভিক্ষা করে খাচ্ছে। আমি যে এর প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে যাবো সেটা কখনও কল্পনা করিনি। আমার সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা একজন মুক্তিযোদ্ধা, আবার সে আমার মত তুচ্ছ একজন মানুষের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে। একটা চিকোন ছুরি যেন আমার বুকটার মাঝখান দিয়ে এফোড় ওফোড় করে দিলো। যাদের ত্যাগের জন্য এত সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারছি তাদের আজ একি হাল। আমি কিছুটা হতাশায় ডুবে যাই, তিনি হয়তোবা সেটা বুঝতে পেরেছিলেন তাই আমাকে শোনাতে শুরু করেন তার যুদ্ধের গল্প। যাতে সে কিছুটা হাল্কা হতে পারে সাথে আমাকেও একটা যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি দেখাতে পারে। অনেক মনোযোগ দিয়ে শুনলাম তার সাহসিকতা আর দেশকে ভালোবেসে সেই যুদ্ধে যাওয়ার কথা। যা বলতে গেলে হয়তোবা শুরু করা যাবে তবে আর লেখা শেষ করা যাবে না। তিনি যে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার সকল প্রমাণ কাছে আছে।তবুও সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নেই তার নাম, কিন্তু তার কাছে আছে অফুরন্ত মুক্তিযুদ্ধের গল্প।

মনির আহমেদ একটি আফসোস করে বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি সনদের জন্য একজন কমান্ডারের কাছে গিয়েছিলাম সে দুই লক্ষ টাকা চেয়েছিলো। আমি নিজেই চলি ভিক্ষা করে কিভাবে দিবো সেই টাকা। তিনি আমাকে বলেন তুমি কি কোন পত্রিকার লোক। স্বভাবসত বলে ফেল্লাম না আমি পত্রিকায় কাজ করি না। কেননা তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তার এই কথাগুলো যেন ছাপানো হয় যাতে সে মারা যাওয়ার পরও মানুষ তার কথা জানতে পারে। আমি তাকে মিথ্যা স্বান্তনা দিতে চাইনি। এছাড়াও আমি কোন পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত নই। কিছু অনলাইন পত্রিকার মাঝেমধ্য গল্প লিখি।

তবে স্বাধীনতার মাসে হয়তোবা তাকে নিয়ে কোন গল্প ছাপানো হবে কোন পত্রিকায়। আবার মাস শেষে বছর জুড়ে তাকে পেট চালাতে হবে এই ভিক্ষা করে।

এভাবেই কি চলবে তাদের জীবন?