সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া বা মিথ্যা সংবাদ পরেবেশন করে ওয়েবসাইটে হিট বাড়ায়ে অর্থ উপার্জনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এমন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। বিশেষ করে ভুঁইফোঁড় ওয়েবসাইটগুলো এ কাজে ওস্তাদ। এতে অনলাইন দুনিয়ার মানুষ খুব সহজে বিব্রত ও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আস্থা ও বিশ্বাস কমে যাচ্ছে অনলাইনের খবরে। ফলে অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত বা স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে কিছু-কিছু পাঠক \’অনলাইনের খবর\’ বলে উড়িয়ে দেন।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষও লক্ষ্য করেছে। সেই সঙ্গে ভুয়া সংবাদের ভয়াবহ বিপদ থেকে মানুষকে সতর্ক করতে ফেসবুক ভারতে অফ-লাইন ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। ভুয়া সংবাদ থেকে সর্তক থাকতে এবং ভুয়া সংবাদ চিহ্নিত করার জন্য ১০টি পরামর্শ দিয়েছে ফেসবুক। যে পরামর্শ কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্ত ও বিব্রত থেকে আপনি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন-
১. শিরোনামের বিষয়ে সন্দেহপ্রবণ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো শিরোনাম দেখেই আবেগপ্রবণ না হয়ে, সন্দেহপ্রবণ হোন। ভুয়া বা মিথ্যা সংবাদ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আকর্ষণীয় শিরোনামের হয়।শিরোনামে বিস্ময় চিহ্ন থাকতে পারে, আপনি তা দেখে আঁতকে উঠতে পারেন। যা আপনাকে লিঙ্কে ক্লিক করতে আকৃষ্ট করবে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
২. ইউআরএল দেখতে প্রায়ই একই রকম
অনেক ভুয়া সংবাদ ওয়েবসাইট দেখতে প্রায় মূলধারার সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটের মত। যা আপনাকে ইউআরএল বা Uniform Resource Locator দেখে নিশ্চিত হতে হবে।
৩. সংবাদের উৎস অনুসন্ধান
যে উৎসে বা সংবাদমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খবর প্রকাশ হয়েছে, সেটার সঠিকতার বিষয়ে আপনার আস্থা নিশ্চিত করুন। সেই সংবাদ অস্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান বা সংবাদমাধ্যম থেকে এসেছে কিনা সেটা আপনাকে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
৪. ফরম্যাট দেখতে অস্বাভাবিক
অনেক ভুয়া সংবাদ সাইটে ভুল বানানের ছড়াছড়ি, তার লেআউট দেখেতেও আনাড়ি। এ ধরনের লক্ষণ দেখলে সেই মাধ্যমের সংবাদ সতর্কভাবে পড়ুন।
৫. ছবি বিবেচনা
ভুয়া সংবাদে প্রায়ই খুব সুক্ষ্মতার সঙ্গে একাধিক ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করতে দেখা যায়। মাঝে-মাঝে সেই ছবি সত্য হতে পারে, তবে লেখা ভিন্ন, ছবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আপনি ইচ্ছে করলে সেই লেখা, সেসব ছবি যাচাই করে দেখতে পারেন, সেসব আসলে কোথায় থেকে এসেছে।
৬. তারিখ যাচাই
প্রায়ই ভুয়া নিউজের গল্পের সঙ্গে ঘটনার তারিখ ভিন্ন দেখা যায়। ঘটনা অনেক আগের হলেও তারিখ পরিবর্তন করে নতুন করে সেই বিষয় সামনে আনা হয়।
৭. তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা
লেখকের ব্যবহৃত উৎসগুলোর সত্যতা ও সঠিকতার বিষয়ে নিশ্চিত হোন। সংবাদে প্রমাণ বা নির্ভরতার অভাব কিংবা নামহীন বিশেষজ্ঞদের মতামত অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া খবরকে নির্দেশ করে।
৮. অন্যান্য রিপোর্ট
একই সংবাদের ওপর অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট দেখুন। একই খবরে যদি অন্য কোনো উৎসে না থাকে, সেক্ষেত্রে সন্দেহ বাড়িয়ে দিন, কারণ এটি ভুয়া সংবাদের ইঙ্গিত দেয়।
৯. লেখাটি কৌতুক কিনা
প্রায়ই হাসি ও বিদ্রুপের ঘটনার মোড়কে ভুয়া কঠিন খবর প্রকাশ করা হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে দেখে নিতে হবে সেটা সংবাদভিত্তিক প্যারোডি সাইট কিনা। ইদানিং অনলাইনে অনেক প্যারোডি নিউজ সাইট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনলাইনে যারা সতর্ক পাঠক নন, তারা এই প্যারোডি নিউজের শিরোনাম দেখে বা নিউজ পড়ে বিভ্রান্ত হন। এতে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিদ্যমান থাকা ধারণা ও আস্থায় চিড় ধরে।
১০. কিছু খবর আন্তর্জাতিকভাবে ভুয়া
আপনি যে সম্পর্কে পড়েন, তা নিয়ে জটিলভাবে ভাবুন। সেই সব খবর শেয়ার করুন যা বিশ্বাসযোগ্য। কেননা প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিকভাবে কিছু ভুয়া নিউজ অনলাইন দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে।
ফেসবুকের এসব পরামর্শ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে- অনলাইন থেকে দ্রুত আর্থিক মুনাফার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিভিন্ন ফেক বা ভুয়া নিউজের ওয়েবসাইট অনলাইনে বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। তাদের খবরের লোভনীয় শিরোনাম মানুষকে বিভ্রান্ত করে সংশ্লিষ্ট লিঙ্কে ক্লিক করতে প্ররোচিত করে। কোনো নিউজের আকর্ষণীয় শিরোনাম দেখেই ক্লিক করা ঠিক নয়। আবার কোনো কারণে সেই নিউজটি পড়ে হুটহাট করে আস্থা বা বিশ্বাস রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
নিউজটি কোন ইউআরএল থেকে প্রকাশ হয়েছে, সেটা যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং সেই ইউআরএল ধারণকৃত ওয়েবসাইটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা কেমন সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। সূত্র: জি-নিউজ
বাংলাদেশ সময় : ১৩১০ ঘণ্টা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ