দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু হওয়ার ফলে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের বিকল্প বা ব্যাকআপ তৈরি হলো। এখন ব্র্ডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেটের কী হবে এমন কথা ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
প্রায় এক যুগ হয়েছে, প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে দেশ যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে ব্র্ডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৬.৫ শতাংশের কিছু বেশি। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযোগ দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রসার বাড়াতে সহায়তা করবে।
প্রসঙ্গত, রবিবার দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৫ চালু হয়েছে।
এদিন সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে এই ক্যাবল-সংযোগ চালু করেন। সি-মি-উই-৫ (SEA-ME-WU-5) হলো একটি কনসোর্টিয়াম। এটি সাউথ ইস্ট এশিয়া (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া)-মিডল ইস্ট (মধ্যপ্রাচ্য)-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ (পশ্চিম ইউরোপ)-৫-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এতে সংযুক্ত রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ,ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইউএই, ওমান, জিবুতি, ইয়েমেন, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি ও ফ্রান্স।
দেশে মোট ব্যবহার হওয়া ৪০০ জিবিপিএস-এর বেশি ব্যান্ডউইথের মধ্যে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-৪) মাধ্যমে দেশ পাচ্ছিল ২৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। দেড় শতাধিক জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায় আইটিসি থেকে। নতুন সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হলে আরও ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাবে বাংলাদেশ। তবে শুরুটা হয়েছে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ দিয়ে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ২০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাবো। পর্যায়ক্রমে তা ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, সি-মি-উই-৫ কনসোর্টিয়াম আমাদের ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএসই ব্যান্ডউইথ দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা শুরুতে নেবো ২০০ জিবিপিএস।
এদিকে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতি হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে আমাদের যুক্ত হতেই হতো। এর কোনও বিকল্প ছিল না। এখন আমরা সেটাও পেয়ে গেলাম। এখন আমরা বেশি ব্যান্ডউইথ পাবো। তিনি মনে করেন,দেশের ১৬ কোটি মানুষ যদি ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ব্যবহার থেকে কিছুটা ওপরে উঠতে পারে তাহলে এই ব্যান্ডউইথেও (১৫০০ জিপিএস) আমাদের কুলোবে না। বাংলাদেশকে ব্যান্ডউইথ আমদানিকারক দেশ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন,‘আমাদের হাতে এখন যথেষ্ট ব্যান্ডউইথ রয়েছে। তাই এখনই ভারত থেকে আইটিসির মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আমাদের ব্রডব্যান্ডের সম্প্রসারণে মনোযোগ বাড়াতে হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী (আইটিইউ-এর গবেষণালব্ধ ফল) দেশে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের হার মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, প্রথম সাবমেরিনের ব্যাকআপ হিসেবে আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) চালু করা হয়েছিল। এখন দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু করে প্রকৃত অর্থেই সাবমেরিন ক্যাবলের বিকল্প বা ব্যাকআপ তৈরি করা হলো। এটা আমাদের দেশের জন্য একটা বিরাট ইতিবাচক দিক। তবে এই সাবমেরিন ক্যাবল ইন্টারনেটের দাম, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বাড়াতে কোনও সাহায্য করবে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, বিএসসিসিএল থেকে কেবল যারা ব্যান্ডউইথ কেনেন তারাই লাভবান হবেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বিএসসিসিএল থেকে ১০ জিবিপিএস –এর কম ব্যান্ডউইথ কেনার কোনও সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে যারা এর ওপরে কিনতে পারে তারাই কেবল লাভবান হতে পারবে।
আমিনুল হাকিম বলেন, তবে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথ বিদেশে রফতানি করা যাবে। তিনি উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় সাবমেরিনকে আমাদের বেশি বেশি ব্যবহার করে আইটিসির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলকে আমরা সর্বাত্মক স্বাগত জানাই। ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথের ক্ষমতা যত বেশি বাড়ে তা দেশের আইসিটি, ব্যবসা বাণিজ্য তথা সার্বিক অর্থনীতির জন্য ভালো। ই-কমার্স খাতের জন্য এই উদ্যোগ ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সব উপজেলায় আগামী বছরের মধ্যে যেন ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ক্যাবল টিভির মতো এ ধরনের সংযোগ প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে টেলিকম অপারেটরগুলোকে বাধ্য করতে হবে প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন সত্যিকারের থ্রিজি সেবা ও গতি পায়। সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন
বাংলাদেশ সময় : ১৭৪১ ঘণ্টা, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ