ঝরে যাওয়া শিক্ষারর্থীরাও যে অনেক বড় করে ফেলতে পারেন, তার বড় উদাহরণে বিলগ গেটস ও স্টিভ জবস। একজন মাইক্রোসফটের জনক। আরেকজন আধুনিক কম্পিউটারের স্বপ্নদ্রষ্টা। বিল গেটস স্কুলে খুব ভালো শিক্ষার্থী ছিলেন।
নইলে এ হাভার্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতেন না। কিন্তু সুযোগ পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে গুরুত্ব দেননি।
পড়াশোনাতে ঠিকমতো মন বসে না তাঁর। প্রযুক্তিপণ্যে ভারি নেশা।
হার্ভার্ডের আশপাশে অনেকগুলো কম্পিউটার সেন্টার গড়ে উঠেছে ততদিনে। মেইনফ্রেম কম্পিউটারে ভরা সে সব সেন্টার। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান আর বড় বড় কোম্পানিগুলো ব্যবহার করার সামর্থ্য রাখত সে সব কম্পিউটার। আসলে সাধারণ মানুষের সাধারণ কারবার তাতে চলত না তাতে।
সাধারণ ডেটা-বিশ্লেষণ, দূর-বর্তার মোর্সকোড ডিকোড করতে আর টুকটাক হিসাব কষতে পারত ওগুলো।
বিল গেটসের আরেক হার্ভাডিয়ান বন্ধু পল অ্যালেন। তাঁরও কম্পিউটারে নেশা। কম্পিউটার সেন্টারে যেটাকে সাইবার ক্যাফে বলে এখন, সেগুলোতে গিয়ে সেসব কম্পিউটার ব্যবহার করতেন দু বন্ধুতে মিলে। নিত্য-নতুন আইডিয়া মাথায় আসত সে সব করতে গিয়ে।
তখন কম্পিউটারের সফটওয়্যার জিনিসটার কেউ নামই শোনেনি। ছিল না পার্সোনাল কম্পিউটারের ধারণাও। ১৯৭৪ সালে একটা অখ্যাত কোম্পানি আল্টেয়ার বেশ ছোটখাটো বক্সাকৃতির একটা কম্পিটার বাজারে আনে। নামে কম্পিউটার হলেও সেটা দিয়ে আহামরি গোছের কিছু করা যেত না। সেটা আসলে দামি খেলনা বা ক্যালকুলেটারের সাধারণ রূপ বৈ কিছু নয়। এই আল্টেয়ারই দুই হার্ভেডিয়ান বন্ধুর মধ্যে ভবিষ্যতের বীজ বোপন করে দেয়। উড়নচণ্ডী স্টিভ জবস যখন স্বপ্ন দেখেন এক দিন বিশ্বের প্রতিটা ঘরে পেঁছৈ যাবে একটা করে পার্সোনাল কম্পিউটার, ঠিকই একই সময়ে হার্ভার্ডের তরুণ বিল গেটস ভাবনার সঙ্গে কর্মও যুক্ত করে ফেলেন।
বিল গেটস ভেবে দেখেন, একটা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ যদি আল্টেয়ারের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তাহলে হয়তো এটা দিব্যি কাজ করবে। বাড়ি ফিরে বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে কাজে লেগে গেলেন। অটোমেটিক পাঞ্চ মেশিনের সাহায্যে পুরু কাগজে ছিদ্র করে লিখে ফেললেন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। সেটার নাম দিলেন তাঁরা ‘বেসিক’।
সফটওয়ার তৈরি করে বসে থাকলেই তো চলবে না। ঠিক জায়গায় সেটা পৌঁছতে না পারলে তো বাজারে বিকোবে না। নিজেদের একটা কম্পিউটারও নেই যে, সফটওয়ারটা পরীক্ষা করে দেখবেন। একমাত্র ভরসা এখন অল্টোয়ার কেম্পানি। কিন্তু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজটা নিয়ে আল্টেয়ার কোম্পানিতে যেতে রাজি নন গেটস। বিলের চেহারা থেকে কৈশরের চিহ্ন তখনো মুছে যায়নি। দেখলে খোকা খোকা লাগে। তাঁর ধারণা, কোম্পানির লোকেরা তাঁকে দেখে ছেলেমানুষ ভেবে বসতে পারে। কে জানে ছোটদের খেলনা ভেবে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজটা চেক না করেই হয়তো ফিরিয়ে দেবে। তাই গেটস চাইলেন একাই যান অ্যালেন। গায়ে-গতরে অ্যালেন বেশ গাঁট্টাগোট্টা। চেহারাতেও সাবালোকের ছাপ।
সাহস করে তাই অল্টেয়ারে একাই গেলেন অ্যালেন। কোম্পানিটির কর্তব্যক্তিদের বোঝাতে সক্ষম হলেন, কেন এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটা কম্পিউটারে ব্যবহার করা জরুরি। অল্টেয়ারের কর্তারা এক অসীম সম্ভবনা দেখলেন এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে। তাই তাঁরা সেটা কিনতে রাজি হয়ে গেলেন। সঙ্গে কিছু পয়সা এসে জুটল গেটস আর অ্যালেনের হাতে। আর এভাবেই প্রথম প্রোগ্রামিংয় ল্যাঙ্গুয়েজেরে জন্ম হলো। কিন্তু সেটা সফটওয়ার ছিল না। সফটওয়্যার কীভাবে এলো, সেটা নিয়ে আরেক লেখায় আলোচনা করা যাবে।