দেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্যের দাম বেড়ে গেছে অন্তত ১০ শতাংশ। কিছুদিন আগে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া মোবাইল ফোন এখন ২২ হাজার, ৬৮ হাজার টাকা দামের কোর-আই ফাইভ মানের ল্যাপটপ এখন বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকায়। কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তিপণ্যের সরবরাহে কোনও সংকট নেই।
সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে বড় কম্পিউটার বাজার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে সরেজমিনে ক্রেতাদের দেখা মিললেও আউটলেটগুলোতে বিক্রির পরিমাণ ছিল কম। বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজার এমনই চলছে। কম্পিউটার কিনতে আসা ধানমন্ডির সালাহউদ্দিন জানালেন, তিনি ল্যাপটপ কিনতে চান, কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় কিনতে পারছেন না। বাজেটে কুলোচ্ছে না। বাজেট ঠিক রেখে তিনি কম কনফিগারেশনের ল্যাপটপ খুঁজছেন। কিন্তু মন মতো না হওয়ায় কিনতে পারছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কম্পিউটার ও সলিউশন পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, ‘আলাদা আলাদা করে বলা যাবে না। কারণ, সব হার্ডওয়্যার পণ্যের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। বাজেটে নতুন ট্যাক্স আরোপ করা না হলে দাম বাজেটের আগ পর্যন্ত এমনই থাকবে। পণ্যের সাপ্লাই চেইনে কোনও সংকট নেই। বাজারে প্রচুর পণ্য রয়েছে।’ তিনি জানান, বাজার কিছুদিন ধরেই ধীরগতির। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে। তিনি মনে করেন, করোনার সময় লকডাউন ও তার পরবর্তী সময়ে লোকজন তাদের প্রয়োজনীয় ডিভাইস কিনে ফেলেছেন। ফলে এখন হয়তো তেমন প্রয়োজন নেই। এই কারণ এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্রেতাদের বাজারে আসার ততটা তাড়া নেই।
দেশের সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিসের পরিচালক (চ্যানেল সেলস) মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বলেন, ‘শুধু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই যে প্রযুক্তিপণ্যের দাম বেড়েছে, তা বলা যাবে না। জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, চিপ সংকটের কারণে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই প্রযুক্তি বাজারে দাম বৃদ্ধির চাপ ছিল।’ হালে ডলারের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় প্রতিটি পণ্যের দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে তিনি জানান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে ক্রেতা কম। বিক্রিও কম। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দেশে প্রাতি মাসে ল্যাপটপের চাহিদা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার। বর্তমানে ল্যাপটপ বিক্রির পরিমাণ মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজারে নেমে গেছে।’
এদিকে দেশের বাজারে ফিচার ও স্মার্টফোনের দামও ৮ থেকে ৯ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মোবাইলের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ। কোথাও কোথাও তা ১০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছে। ডলারে ন্যূনতম ১২ শতাংশ ডিভ্যালু হওয়ায় তা ১০ শতাংশে পৌঁছেছে।’ পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং চিপ সংকটও একটা বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘দাম না বাড়িয়ে কোনও উপায় নেই।’ কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ তো আমদানি করতে হয়। তিনি জানান, কিছু কিছু ব্যবসায়ী এখনও কমদামে (১০ শতাংশ দাম না বাড়িয়ে) মোবাইল বিক্রি করে সেল ভলিউম ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। ফলে এখনও বাজারে কোনও কোনও মোবাইল কিছুটা কম দামে পাওয়া গেলেও বেশিদিন এভাবে চলবে না।
স্মার্টফোনের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক বছর আগে যে দামে যে মোবাইল একসেসরিজ বিক্রি হয়েছিল, বর্তমানে তা ১ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। এই পণ্যে ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব এখনও পড়েনি, পড়লে দাম আরও বাড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় একাধিক মোবাইল ফোন নির্মাতা ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান নতুন করে দাম বাড়ায়নি, বরং অনলাইনে বিশেষ ছাড় দিয়ে আগের দামে পণ্য বিক্রি করছে। কোনও কোনোটার সঙ্গে উপহারও দেওয়া হচ্ছে। এভাবে বেশিদিন মোবাইল ফোন বিক্রি করা যাবে না বলে তারা মনে করেন।