গোটা বিশ্বে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে মহামারী করোনা রোগীর সংখ্যা। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বিশ্ব টিকার আশায় দিন গুনছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস টিকা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত একদল আইরিশ বিজ্ঞানী বলেছেন, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকেই টিকা প্রস্তুত হয়ে যেতে পারে।
অক্সফোর্ডে একদল গবেষকের নেতৃত্বে রয়েছে আইরিশ বিজ্ঞানী আদ্রিয়ান হিল। তিনি এর আগে ইবোলা ও ম্যালেরিয়ার টিকা তৈরিতে কাজ করেছেন। গত মে মাস থেকে তাঁর গবেষকদল করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে কাজ করছে। আইরিশ সংবাদমাধ্যম আইরিশ সেন্ট্রাল জানিয়েছে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অক্সফোর্ডের টিকার মানব পরীক্ষা খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ডের টিকা পরীক্ষা করে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা ও এ থেকে সেরে ওঠা সবার শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যে এ টিকার প্রথম ধাপের পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়ার কথা বলেছেন গবেষকেরা।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ডের গবেষকেরা মনে করেন, করোনাভাইরাস টিকা আবিষ্কারের জন্য তাঁরা যে হন্যে হয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের শরীরে টিকার পরীক্ষার ফলাফল দেখে তাঁরা আশান্বিত হয়েছেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ‘দ্বিগুণ সুরক্ষা’ দেবে টিকাটি।
যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের গবেষকেরা করোনাভাইরাসের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে আশাবাদী। তাঁদের মতে, এই টিকা করোনার বিরুদ্ধে ‘দ্বিগুণ সুরক্ষা’ দেবে। প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষায় এমন প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি তাঁদের। এদিকে মানব শরীরে ওই টিকার প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষার তথ্য আগামী সোমবার চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত একটি শক্তিশালী সূত্রকে উদ্ধৃতি করে ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকার একটি ডোজ দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাজ্যের এমন একদল স্বেচ্ছাসেবীর রক্তের নমুনা থেকে দেখা গেছে, এটি অ্যান্টিবডি তৈরি ও ভাইরাস বিনাশকারী ‘টি-সেল’ তৈরির জন্য মানব শরীরকে উপযুক্ত করে তুলেছে।
পৃথক কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েক মাসের মধ্যেই শরীরে অ্যান্টিবডির কার্যক্ষমতা লোপ পেতে পারে। কিন্তু অক্সফোর্ডের গবেষণার আশার দিক হচ্ছে, টিকাটি শরীরে অ্যান্টিবডির পাশাপাশি টি-সেল তৈরিতেও কার্যকরী। তাই কয়েক মাসে অ্যান্টিবডি নষ্ট হয়ে গেলেও শরীরে বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারে টি-সেল।
ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ণ ফলাফল পাওয়া গেলে টিকা নিয়ে আরও ইতিবাচক ফল জানা যাবে। এ ছাড়া এ টিকা নিয়ে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না এমন তথ্যও পাওয়া যেতে পারে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা যুক্তরাজ্যে ১০ কোটি ডোজ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ কোটি ডোজ সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরেই এ টিকা সরবরাহ শুরু করতে পারে।
অক্সফোর্ডের গবেষক দল এখন ‘চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’ নামে মানুষের ওপর বিশেষ পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছেন যেখানে মানুষকে সরাসরি ভাইরাসে আক্রান্ত করা হবে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিন দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখতে ভাইরাসের সংস্পর্শে আনা হবে। গবেষকেরা আশা করছেন, এ পদ্ধতিতে তারা দ্রুত ভ্যাকসিনের ফল জানতে পারবেন।
এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর কোনো পরীক্ষিত চিকিৎসা না থাকায় চ্যালেঞ্জ ট্রায়ালকে বিতর্কিত হিসেবে হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে, আইরিশ বিজ্ঞানী আদ্রিয়ান হিল বলেন, করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ ট্রায়ালে ঝুঁকি কম থাকবে কারণ স্বেচ্ছাসেবীদের অধিকাংশের বয়সই হবে ২০-এর ঘরে। গবেষকেরা এ বয়সের মানুষের করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার কম বলে দাবি করে আসছেন।
অক্সফোর্ডের টিকার তৃতীয় ধাপের মানব পরীক্ষার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল চালানোর লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন গবেষকেরা। তবে গবেষকেরা বলছেন, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পেতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এ কারণেই তারা চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল শুরু করছেন।
গবেষক হিল বলেন, ‘টিকা তৈরির প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে এবং এ সংক্রান্ত বাড়তি তথ্য পেতে এটা জরুরি।’
ইতিমধ্যে চ্যালেঞ্জ ট্রায়ালের পক্ষে একটি খোলা চিঠিতে নোবেল বিজয়ীসহ জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীরা সই করেছেন। ওই চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের প্রধান ফ্রান্সিস কলিন্সকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। ‘ওয়ান ডে সুনার’ নামের একটি সংস্থার পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে চ্যালেঞ্জ ট্রায়ালের পক্ষে ১০০ বিজ্ঞানী সই করেছেন।