করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যস্ত গোটা বিশ্বের গবেষকেরা। চীনা গবেষকেরা একটি ওষুধ তৈরিতে কাজ করছেন, যা করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চীনের বিখ্যাত পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা নতুন ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা করছেন। তাঁরা দাবি করছেন, করোনা সংক্রমিত রোগিদের এ ওষুধ শুধু দ্রুত নিরাময়ই করবে না, পাশাপাশি কম সময়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী করে তুলবে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়ার আগে গত বছরের শেষের দিকে চীনে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বর্তমানে এর চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন খুঁজতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গত রোববার বিজ্ঞান সাময়িকী \’সেল\’–এ এই গবেষণা বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।এতে বলা হয়েছে, ভাইরাসে সংক্রমিত কোষ প্রতিরোধে ব্যবহৃত নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি রোগের সম্ভাব্য নিরাময় ও পুনরুদ্ধারের সময়কে কমিয়ে আনে।
পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেইজিং অ্যাডভান্সড ইনোভেশন সেন্টার ফর জিনোমিক্সের পরিচালক সানি শেই এএফপিকে বলেন, পশু পরীক্ষার পর্যায়ে ওষধি সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে। সংক্রমিত ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়ায় এটি সম্ভাবনা জাগিয়েছে।
গবেষক শেই ও তাঁর দল পরীক্ষার জন্য গুচ্ছ সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ৬০ জন রোগীর অ্যান্টিবডি আলাদা করেন। তাঁরা মানবদেহে ইমিউন সিস্টেম সৃষ্ট নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি থেকে ওষুধ তৈরি করেন।
গবেষক শেই বলেন, তাঁর গবেষক দল অ্যান্টিবডির খোঁজ পেতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। তিনি বলেন, \’আমাদের দক্ষতা ইমিউনোলজি বা ভাইরোলজির চেয়ে একক সেল জিনোমিক্সে। যখন আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এককোষের জিনোমিক পদ্ধতি কার্যকরভাবে নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি খুঁজে পেতে পারে, তখন আমরা পুলকিত হয়েছিলাম।\’
গবেষক শেই বলেন, ওষুধ এই বছরের শেষের দিকে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত। এ নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রক্রিয়া চলছে। চীনে সংক্রমণ কমে আসায় অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশে এর পরীক্ষা হবে।
গত সপ্তাহে চীনের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, দেশটিতে মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে চলে গেছে ছয়টি ভ্যাকসিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এক থেকে দেড় বছর সময়সীমার মধ্যে ভ্যাকসিন পেতে চাইছে।
চীনা গবেষকেরা প্লাজমা থেরাপির সম্ভাব্য সুবিধার দিকেও দৃষ্টি দিচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে রোগ থেকে সেরে ওঠা একজনের শরীর থেকে প্লাজমা নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে দেওয়া হয়। চীনে ৭০০ জনের বেশি রোগীকে এ থেরাপি দেওয়া হয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্লাজমা ব্যবহারে খুব ভালো থেরাপিউটিক প্রভাব দেখা গেছে। তবে গবেষক শেই বলেন, প্লাজমার সরবরাহ খুব স্বল্প । তাদের ওষুধে যে ১৪ ধরনের নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা হবে, তা দ্রুত উৎপাদন করা যাবে।
ওষুধ চিকিৎসা অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা কোনো নতুন পদ্ধতির নয় এবং এটি এইচআইভি, ইবোলা এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (এমইআরএস) এর মতো আরও বেশ কয়েকটি ভাইরাসের চিকিৎসা করতে সফল হয়েছে। গবেষক শেই বলেন, তাঁরা চীনে ভাইরাস ছড়ানোর পরপরই কাজে নেমে পড়েছিলেন।
এর আগে রেমডেসিভির ওষুধটি কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়। এতে এক–তৃতীয়াংশ রোগী কম সময়ে সুস্থ হন। নতুন ওষুধটি আরও কম সময়ে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে।
গবেষকেরা বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাস শরীরে পুশ করার আগে যদি নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি পুশ করা হতো, তবে ইঁদুরে সংক্রমণ ঘটতো না। গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের ওষুধ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ রাখবে।
বিশ্বজুড়ে ১০০টির বেশি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। তবে ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়টির যেহেতু বেশি চাহিদা, গবেষক শেই আশা করছেন নতুন ওষুধ আরও দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে করোনা নির্মূল করতে সক্ষম হবে। ভ্যাকসিন তখন হলেও চলবে বলে মন্তব্য করেন শেই।