আপনি অবশ্যই জানেন, উইন্ডোজ সেভেন কতটা জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। প্রথমে মানুষ উইন্ডোজ এক্সপি ছাড়তে পারছিল না এখন উইন্ডোজ সেভেন অনেকে ছাড়তে পারছে না। তবে সবকিছুর একটা শেষ রয়েছে, আর উইন্ডোজ সেভেনের অফিশিয়াল এক্সটেন্ডেড সাপোর্ট ২০২০-এর জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে শেষ হতে চলেছে। মানে আর ১ মাসের সময় নেই। কেন উইন্ডোজ সেভেন ব্যাড আইডিয়া, কেন উইন্ডোজ টেন ব্যবহার করা উচিত এবং উইন্ডোজের সাপোর্ট সাইকেল কীভাবে কাজ করে ইত্যাদি টপিকগুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এ লেখায়।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট টাইম লাইন
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের যে কোনো ভার্শনের উইন্ডোজ মূলত ১০ বছরের সাপোর্ট পেয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রথম ৫ বছর হচ্ছে মেইনস্ট্রিম সাপোর্ট; যেখানে ফিচার আপডেট, ডিজাইন আপডেট, ইউআই আপডেট, সিকিউরিটি আপডেট, বাগ ফিক্স, ইত্যাদি প্রদান করা হয়ে থাকে। আর সত্যি বলতে মাইক্রোসফট খুবই ভালো মেইনস্ট্রিম সাপোর্ট প্রদান করে আর এটা তারা অ্যাক্টিভভাবেই হ্যান্ডেল করে থাকে।
মেইনস্ট্রিম সাপোর্ট শেষ হওয়ার পরের পাঁচ বছরে এরা এক্সটেন্ডেড সাপোর্ট প্রদান করে। যেখানে শুধু বাগ ফিক্স এবং সিকিউরিটি আপডেট প্রদান করা হয়ে থাকে। নতুন কোনো ফিচার বা ডিজাইন আপগ্রেড করা হয় না। উইন্ডোজ সেভেনের মেইনস্ট্রিম সাপোর্ট ২০১৫তেই শেষ হয়ে যায়, যেহেতু এটা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অপারেটিং সিস্টেম তা-ই এর মেইনস্ট্রিম সাপোর্ট কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। যাই হোক, জানুয়ারি ২০২০ এ এর এক্সটেন্ডেড সাপোর্টও শেষ হতে চলেছে।
উইন্ডোজ সেভেনে হ্যাকারদের মজা
আর মাত্র কয়েক মাস, তার পরে উইন্ডোজ সেভেন ইউজ করা সত্যি অনেক রিস্কি ব্যাপার হয়ে যাবে। এমন কোনো অপারেটিং সিস্টেম যেটার সিকিউরিটি আপডেট এবং বাগ ফিক্স বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেটা ব্যবহার করতে আমি কখনোই রেকোমেন্ড করব না। হ্যাকার তো এটাই চায়, এরকম কম্পিউটারকেই হ্যাকার টার্গেট বানাবে আর যা ইচ্ছা ম্যালিসিয়াস কার্যক্রম চালাবে। এরকম অপারেটিং সিস্টেম তো হ্যাকারের কাছে স্বর্গ সমতুল্য।
এখনো উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহার করা সেফ, কিন্তু সেটা আর মোটেও কয়েক মাস পরে থাকবে না। ঠিক যখন থেকে এর সাপোর্ট শেষ হবে তখন থেকেই বাগ আর সিকিউরিটি ভালনেরাবিলিটি খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে হ্যাকাররা। যেহেতু এখনো অনেক ইউজার উইন্ডোজ সেভেন ই ব্যবহার করে এবং অবশ্যই এর সাপোর্ট শেষ হওয়ার পরেও করবে, তাই হ্যাকারের কাছে উইন্ডোজ সেভেন স্বপ্নের অপারেটিং সিস্টেমে পরিণত হতে পারে।
আরো তিন বছরের এক্সট্রা এক্সটেন্ডেড সাপোর্ট
কাহিনি কিন্তু এখানেই শেষ নয়, যদিও ২০২০ থেকে এর এক্সটেন্ডেড সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু মাইক্রোসফট আরো তিন বছরের পেইড এক্সটেন্ডেড সাপোর্ট প্রদান করবে। মানে মোটামুটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত এর সিকিউরিটি আপডেটগুলো রিলিজ করা হবে, কিন্তু আপনি এক্সট্রা টাকা পে না করলে সেটা ডাউনলোড করে অ্যাপ্লাই করে নিতে পারবেন না।
যদিও এই এক্সট্রা সময় দেওয়ার পেছনে অনেক কারণ ও রয়েছে। অনেক কোম্পানি এখনো পর্যন্ত উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহার করে, তাদের সকল সফটওয়্যার বা কার্যক্রম সে অনুসারে সেট করা রয়েছে। আপনি হয়তো হোম কম্পিউটার কয়েক মিনিটের আলাদা অপারেটিং সিস্টেমে আপগ্রেড করে নিতে পারবেন, কিন্তু কোম্পানিদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মোটেও সেরকম ইজি নয়।
তাদের কোম্পানিতে অনেক কম্পিউটার রয়েছে, সেগুলোকে আপগ্রেড করতে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। বিজনেসে ডাউন টাইম মানেই অনেক টাকার লোকসান। তাছাড়া নতুন অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড করলে কর্মচারীদের নতুন করে ট্রেইনিং প্রদান করতে হবে। হ্যাঁ, আপনি আর আমি হয়তো ভাবছি এটা আবার ব্যাপার হলো? উইন্ডোজের সকল অপারেটিং সিস্টেম একই প্রায়, একটা ইউজ করলে আরেকটা আরামে ইউজ করা যেতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন এমন অনেক লোক রয়েছে যারা মুখস্থ করে কম্পিউটার ইউজ করে, তাদের সামনে ‘My Computer’ এর জায়গায় ‘This PC’ হয়ে গেলেই হবে।
তাছাড়া অনেক সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো হয়তো নতুন অপারেটিং সিস্টেমে ঠিকঠাক কাজই করবে না। হতে পারে ঐ সফটওয়্যার অনেক গভীরভাবে প্রোগ্রামিং করা বা হতে পারে আদিম যুগের সফটওয়্যার যেটা নতুন অপারেটিং সিস্টেমের যোগ্য নয়। তো কাজের সফটওয়্যার ব্যবহার না করা গেলে তো কোম্পানিদের লস! তাই এ সকল কথা বিবেচনা করে উইন্ডোজ সেভেন এ আরো তিন বছর এক্সট্রা সাপোর্ট দেওয়া হবে।
কিন্তু এই ৩ বছরের এক্সটেন্ডেড সাপোর্ট মোটেও সস্তা নয়, আপনি কোন উইন্ডোজ এডিশন ইউজ করছেন সে অনুসারে আপনাকে প্রত্যেক বছরে ডাবল টাকা পে করতে হবে। যেমন- উইন্ডোজ সেভেন প্রো-এর ক্ষেত্রে প্রথম বছরে ৫০ ডলার, দ্বিতীয় বছরে ১০০ ডলার এবং তৃতীয় বছরে ২০০ ডলার পে করতে হবে এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি আপডেট পাওয়ার জন্য। তাছাড়া উইন্ডোজ সেভেন এন্টারপ্রাইজের ক্ষেত্রে প্রথম বছর ২৫ ডলার, দ্বিতীয় বছর ৫০ ডলার এবং তৃতীয় বছরের জন্য ১০০ ডলার পে করতে হবে।
এখন একটি কোম্পানিতে তো আর একটা কম্পিউটার থাকে না, আর এই প্রাইস কিন্তু মাথাপিছু কম্পিউটার হিসেবে—তো বুঝতেই পারছেন কতটা ব্যয়বহুল। তার পরেও মাইক্রোসফট একটি রাস্তা খোলা রেখেছে, যাতে কোম্পানিগুলো কিছুটা সময় নিয়ে হলেও নতুন অপারেটিং সিস্টেমে আপগ্রেড করতে পারে। আর এই সময়ের মধ্যে তারা পে করে পুরাতন অপারেটিং সিস্টেমেই আপডেট পেতে পারবে।
কতজন উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহার করছে?
এখনো বেশি ইউজার উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহার করে। একটি অনলাইন ওয়েবসাইট statcounter.com অনুসারে এখনো ৩৫ শতাংশ টোটাল ইন্টারনেট ইউজার এখনো উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহার করে। তারা আসলে ওয়েব ব্রাউজার থেকে ডাটা কালেক্ট করে, যে কোনো অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে। সে অনুসারে এই ডাটা তৈরি করেছে।
তাদের এই অ্যানালাইজ করা ডাটা অনুসারে ৫৩ শতাংশ টোটাল ইন্টারনেট ইউজার উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করে বর্তমানে। তো বুঝতেই পারছেন, এখনো সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ উইন্ডোজ সেভেন ইউজার। গত বছরের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ ইউজার উইন্ডোজ সেভেন থেকে উইন্ডোজ ১০ এ আপগ্রেড করেছে। তো বুঝতেই পারছেন, উইন্ডোজ সেভেন সাপোর্ট অফ হয়ে যাওয়ার পরে এই তিন ভাগের এক ভাগ ইউজার কতটা বেশি সিকিউরিটি রিস্কের মধ্যে পড়ে যাবে, হ্যাকার ভালনেরাবিলিটি খুঁজে পাওয়া মাত্রই অ্যাটাক দেবে এটা নিশ্চিত।