বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তিন মাসে ফেসবুক আয় করেছে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বা ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার। এ হিসাবে বছরে চার প্রান্তিক থেকে ফেসবুকের আয় গড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মতো। তৃতীয় প্রান্তিকে ফেসবুকের মোট রাজস্ব আয় বাংলাদেশি টাকায় দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। এ হিসাবে বাংলাদেশ থেকে আয়ের পরিমাণ ফেসবুকের মোট আয়ের শূন্য দশমিক দুই শতাংশ (০.২)।
আন্তর্জাতিক আয়ের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর এবং অন্যান্য ব্যয় বাদে এ প্রান্তিকে ফেসবুকের নিট মুনাফার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। গত ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল রোববার এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ফেসবুক ইনভেস্টর রিলেশনস ওয়েবসাইটে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ প্রান্তিকে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবহারকারীপ্রতি ফেসবুকের আয় ১৫ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। চলতি বছরের শুরুর দিকে ফেসবুক প্রকাশিত ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ। বাংলাদেশে শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ২০১৮ সালে আয় করেছিল প্রায় ১৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারকে কর দিয়ে এবং বছরে বিনিয়োগ ও অন্যান্য খরচ বাদে তাদের নিট মুনাফা ছিল প্রায় তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফেসবুকের ব্যবহারকারী প্রায় ২৪০ কোটি। যাদের মধ্যে প্রতিদিন সক্রিয় থাকে প্রায় ১৬২ কোটি ব্যবহারকারী। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কর দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে। অন্যান্য দেশগুলোর ব্যবহারকারীরা সংশ্নিষ্ট \’ফেসবুক আয়ারল্যান্ডের\’ সঙ্গে। ১৯৮০ সালে প্রণীত যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য প্রণীত \’দ্বৈত\’ আইরিশ চুক্তির আওতায় \’ফেসবুক আয়ারল্যান্ড\’কে শুধু ২ থেকে ৩ শতাংশ হারে আন্তর্জাতিক কর দিতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের বিনিয়োগও হয় কেন্দ্রীয়ভাবে, আয়ও দেখানো হয় কেন্দ্রীভূত হিসেবে। ফলে বিশ্বের সব দেশেই ফেসবুক ব্যবহারকারী (ফেসবুক ব্লক করা চীনসহ দু-তিনটি দেশ ছাড়া) থাকলেও এবং সব দেশ থেকেই কম-বেশি আয় হলেও কোনো দেশেই কর দিতে হচ্ছে না ফেসবুককে। ফেসবুকের মতো অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ ও অনলাইন সেবা মাধ্যম গুগল, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্নাপচ্যাট, ওটিটি সেবা মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো, গুগল ডুয়ো একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং আয় করছে। তবে এ মুহূর্তে আয় ও সম্পদের স্থিতির হিসাবে এগিয়ে আছে গুগল। দ্বিতীয় স্থানে আছে ফেসবুক।
ফেসবুকের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী আগের মতোই ব্যবহারকারীপ্রতি সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সে দেশে ব্যবহারকারীপ্রতি আয়ের পরিমাণ প্রায় ১৫৮ মার্কিন ডলার। ইউরোপের দেশগুলো থেকে ব্যবহারকারীপ্রতি গড় আয়ের পরিমাণ ৫১ মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন থেকে আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ, বিনিময়মূল্যের বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা থেকে বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় মোট আয় বেড়েছে ২৯ শতাংশ এবং নিট মুনাফা বেড়েছে ১৯ শতাংশ।