দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের ছড়াখালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে (হাঁটাচলার পথ)। সুরমার তীরসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। ওয়াকওয়ে ও দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারাগুলো নির্মাণ করে প্রশংসায় ভাসছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু তার এ কর্মে অঙ্কুরেই ছাই ছিটানো হচ্ছে।
সিলেট শহরকে সুন্দর করে সাজাতে তার এ উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে তদারকির অভাবে! নির্মিত ওয়াকওয়েগুলোতে মাসের পর মাস জমে থাকছে আবর্জনার স্তূপ। আর মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ফোয়ারাগুলো। দীর্ঘদিন ধরে অচল ফোয়ারাগুলোতে জমে থাকা পানি ও আবর্জনার ভাগাড়ে মশার প্রজনন হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিছুদিন যাবত শহরময় মশার প্রাদুর্ভাবে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম শুরু করেছে সিসিক। শহরের বাসা-বাড়ির আশপাশ, ছড়াখালে মশার ওষুধ ছিটালেও দৃষ্টির আড়ালে থেকে গেছে ফোরায়াগুলো। অযত্নে থাকা অচল হয়ে যাওয়া ফোয়ারায় মশার লার্ভার অস্তিত্ব মিলেছে। অথচ বিগত দিনে মশার লার্ভা পাওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের ছড়াখালগুলোর উপর ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সৌন্দর্যবর্ধন করা হলেও অযত্ম-অবহেলায় তা অল্পদিনেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের জল্লারপাড়ের জল্লাছড়ার বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ওয়াকওয়েতে রেখেছেন আবর্জনা। প্রায় দেড় মাস ধরে সেখানে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকলেও সিসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সেগুলো পরিষ্কারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তদারকি না থাকায় জল্লাছড়া ওয়াকওয়ের গ্রিল কেটে নিচ্ছে চোরেরা। সেইসঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও দোকানের ফেলা আবর্জনার ভাগাড় জমে আছে খালের উপর নির্মিত ওয়াকওয়েতে।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, শহরে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি বক্স কালভার্ট ও পাঁচটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে গোয়াবাড়ি কালিবাড়িছড়ায় এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মিত হয়েছে ছয় কোটি টাকায়। রিকাবিবাজার সংলগ্ন মাদার কেয়ার ক্লিনিকের পাশের মঙ্গলীছড়ায় ৪০০ মিটার বক্স কালর্ভাট পাঁচ কোটি টাকায়। তৎসংলগ্ন পুরাতন মেডিক্যালের পাশের ওয়াকওয়ে ৩০০ মিটার এক কোটি টাকায়। হাতিমআলী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে জাফলং সড়ক পর্যন্ত হলদীছড়ায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওয়াকওয়ে এক কোটি টাকায়। উপশহর রোজভিউ হোটেলের পেছনে গোয়ালিছড়ায় ১০ কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে প্রায় ৭০০ মিটার ওয়াকওয়ে। বালুচরে গোয়ালিছড়ার অংশে ৩০০ মিটার ওয়াকওয়ে তিন কোটি টাকায়। জল্লারপাড় বক্স কালভার্ট ৩০০ মিটার তিন কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সিসিক এ উন্নয়ন করলেও গ্রিল কেটে চুরি হওয়াটা দুঃখজনক। আর আবর্জনার ভাগাড় রাখার বিষয়টি সত্য। এগুলো সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ওয়াকওয়েগুলো ইজারা দিয়ে প্রবেশমূল্য ১/২ টাকা নির্ধারণ করা হবে। তখন সেগুলো ইজারাদারদের রক্ষণাবেক্ষণে থাকবে।
এদিকে ফোয়ারায় মশার প্রজনন বিষয়টি স্বীকার করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, শহরে মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। ফোয়ারাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেওয়া হবে।
পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কনজারভেটিভ অফিসার হানিফুর রহমানকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।